বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ , ১৩ চৈত্র ১৪৩০

modhura
Aporup Bangla

ভাইবোনের গল্প।। জাকির তালুকদার

শিল্প-সাহিত্য

জাকির তালুকদার

প্রকাশিত: ১০:২৩, ৬ ডিসেম্বর ২০২২

আপডেট: ১০:২৫, ৬ ডিসেম্বর ২০২২

সর্বশেষ

ভাইবোনের গল্প।। জাকির তালুকদার

অলংকরণ : জীবন শাহ

এই গল্প চলনবিলের সবাই জানে।
         দুই ভাই-বোনের গল্প।   
         তাদের মা নেই, বাবা নেই। তারা শুধু দুই ভাই-বোন। থাকে গাঁয়ের একপ্রান্তে এক কুটিরে।
ভাই সকালে বেরিয়ে যায় কাজে। নিজের নৌকা নেই। অন্যের নৌকায় মাছ ধরে। আঘুন মাসে ধান কাটার কাজ করে। যখন কাজ পায় না তখন গঞ্জের ঘাটে গিয়ে কুলিগিরি করে। তাও যখন জোটে না, তখন ভাই-বোনে উপোস দেয়। 
        তাদের বড় কষ্ট। চুলায় রোজ আগুন জ্বলে না। হাঁড়িতে চাল নেই। ঘরে খাট-চৌকি নাই। তাই ইঁদুরের গর্তভরা মেঝেতে তারা ছালা পেতে ঘুমায়। বর্ষার রাতগুলোতে ঘুম হয় না। কারণ শন আর হোগলা পাতার ছাউনি দিয়ে ঝর ঝর করে বৃষ্টির পানি পড়ে।
       তো তাদের কোনো আনন্দ অনুষ্ঠান নাই। ঈদ-পরবে নতুন কাপড় নাই। কোথায় পাবে নতুন কাপড়! ভাইটা খেটে-খুটে যা উপার্জন করে, তা দিয়ে দিনে দুইবেলা খাবারই হয় না। কাপড় কিনবে কোত্থেকে! কিন্তু মানুষের তো কাপড় পরতেই হয়। তারাও পরে। তবে তাদের আছে তাদে শুধুই একটা করে কাপড়। তাও এদিকে ফাটা ওদিকে তালি। তারা সেই এক কাপড়েই দিন কাটায়। ভোরবেলা খুব ভোরে লোকজন জেগে ওঠার আগে তারা বিলে নাইতে যায়। রোজ ভেজা কাপড় গায়ে রেখে শুকোতে হয়। এতে সর্দি-গর্মি হয়। তাই তারা কোনো-কোনোদিন কাপড় খুলে পাড়ে রাখে। তারপর ঝুপ ঝুপ করে কয়েকটা ডুব দিয়ে উঠে তড়িঘড়ি কাপড় পরে ঘরে ফিরে আসে। গাঁয়ের লোক জেগে ওঠার আগেই তাদের গোসল সেরে নিতে হয়।
         একদিন ভোরে ঘুম ভাঙতেই বোনের মনে পড়ল আজ তার ভাইয়ের জন্মদিন। জন্মদিনে ভাইকে একবাটি পায়েশ রেঁধে খাওয়ানোর খুব ইচ্ছা বোনের। কিন্তু কোথায় পাবে সে দুধ, চিনি, আতপ চাল! সেই  দুঃখে ঘুম ভেঙেই কাঁদতে শুরু করল সে। কাঁদছে কোনো শব্দ না করে। কারণ সে জানে, বোনের কান্না সহ্য করতে পারে না তার ভাই। কেঁদে কেঁদে নিজের বালিশ ভিজিয়ে ফেলল সে। তারপর মনে পড়ল, ভাই তার শালুকের তরকারি খেতে খুব পছন্দ করে। সে ঠিক করল আজ সে গোসল করতে গিয়ে শালুক তুলে আনবে। সে তক্ষুনি উঠে পড়ল। গেল বিলের কাছে। সে যেখানে রোজ গোসল করে, সেখানে কোনো শালুক দেখা যায় না। শালুক ফুটে আছে অনেকখানি দূরে। হোক দূরে! সে সাঁতার কেটে যাবে শালুক আনতে। বোন পাড়ে কাপড় রেখে নামে বিলের পানিতে। তারপর সাঁতরে চলে দূরে ফুটে থাকা শালুকের দিকে।
         গরমের দিন। সারারাত ওরা গরমে ভাজা ভাজা হয়েছে।
         সারারাতের গরমের পরে পৃথিবী তখন কেবল একটু শীতল হয়েছে। ভোর হয়েছে। গুমোট ভাবটা আর নাই, অল্প অল্প বাতাস বইছে। পানিতে নেমে আরাম লাগছে খুব। বোন আনন্দে ডুবের পর ডুব দেয় আর কখনো ডুবসাঁতার কখনো চিৎসাঁতার দিয়ে এগিয়ে যায় শালুকের দিকে। অনেক সময় লাগে তার শালুকের কাছে পৌঁছুতে। তারপর সেগুলো তুলতেও সময় লাগে অনেকক্ষণ। কয়েকটা শালুক তুলে নিয়ে খুশিমনে ঘাটে ফিরে আসে সে। এই সময় পাড়ের দিকে তাকিয়ে দেখে, পাড়ে রাখা তার কাপড়টা নেই। অমনি তার বুকের মধ্য ধ্বক্ করে উঠল। কে নিল কাপড়? নিশ্চয়ই কোনো চোর-টোর হবে। হায়রে চোর!  এই অভাগিনী মেয়ের একটামাত্র ছেঁড়া কাপড়। সেটাও তোকে নিতে হলো। বোন রাগে-দুঃখে কেঁদে ফেলে চিৎকার করে ডাকেÑ ‘ভাই। ভাই এদিকে এসো। আমার বড় বিপদ।’
         ডাক শুনে দা হাতে ছুটে এল ভাই। কুমির-কামট ধরল নাকি বোনকে?
         কাছে এসে স্বস্তির হাঁফ ছাড়ল। না কোনো কুমির দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু গলা পানিতে দাঁড়িয়ে কাঁদছে তার বোন। ভাই জিজ্ঞেস করল ‘কী হয়েছে বোন? কাঁদছিস কেন?’
         ‘ভাই আমার কাপড়টা পাড়ে রেখেছিলাম। কে যেন নিয়ে গেছে।’
          ‘তাই তো!’
          ভাই কিছুক্ষণ এদিক ওদিক ছুটোছুটি করল। কিন্তু কাউকে দেখতে পেল না। কাপড়ও না। সে ঘাটে এসে বললÑ ‘বোন, কাপড় তো পেলাম না। তুই ঘরে চল।’ 
         বোন ডুকরে কেঁদে উঠলÑ ‘কাপড় ছাড়া আমি কীভাবে ঘরে যাব ভাই!’
         এবার ভাইয়ের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। সত্যি বটে। বোন ঘরে যাবে কীভাবে!
         সে বলল ‘তুই পানিতেই থাক। আমি কাপড় নিয়ে আসি।’
         ভাই চলল তাঁতি পাড়ায়। এর কাছে যায় ওর কাছে যায় ‘একটা কাপড় দাও গো। আমার বোনের বড় দরকার।’
         তাঁতি বলেÑ ‘কীভাবে তোমাকে কাপড় দেব বলো? আমরা কাপড় বুনি বটে, কিন্তু কাপড়ের মালিক আমরা নই। মালিকের হুকুম ছাড়া তো কাপড় দিতে পারি না। তুমি মালিকের হুকুম নিয়ে এস।’
         ‘মালিক কে?’
         ‘মালিক হলো মহাজন। আমরা তার কাছে দাদন নিয়েছি। এখন খাই বা না খাই কাপড় বুনে তুলে দিতে হয় তার হাতে।’
         ‘মহাজন কোথায় থাকে?’
         ‘থাকে তার কুঠিতে। অন্য গাঁয়ে।’
         তাঁতিরা তাকে মহাজনের কুঠির হদিস বাতলে দেয়।
         ভাই চলল মহাজনের খোঁজে। 
         এদিকে বোন তো পানিতে গলা ডুবিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কোনো লোক দেখলেই ডুব দিচ্ছে পানিতে। নিশ্বাস বন্ধ করে লুকিয়ে থাকছে পানির নিচে। লোক চলে গেলে ভুস করে ভেসে উঠে এদিক-ওদিক দেখছে। তার চোখে ব্যাকুল দৃষ্টি। শুধু ভাইকে খুঁজছে। বেলা যত বাড়ে লোকের আনাগোনা তত বাড়তে থাকে। মানুষ-জনে গম গম করে ঘাট। একের পর এক নৌকা আসা-যাওয়া করতে থাকে। বোন তখন বাধ্য হয়ে বেশিরভাগ সময় ডুবে থাকে পানির নিচে। যখন আর বাতাস ছাড়া চলেই না, বুকটা তার ফেটে যাওয়ার উপক্রম হয়, শুধু তখনই পানির ওপর মাথা তোলে। বুক ভরে নিশ্বাস নেয়, মাথা ঘুরিয়ে ভাইকে খোঁজে তারপর আবার ডুব দেয়।
         আর পারা যায় না! বোন আকুল হয়ে মনে মনে ভাইকে ডাকে। কিন্তু ভাইয়ের ছায়াও দেখা যায় না। একসময় অবসন্ন হয়ে বোন একেবারেই তলিয়ে যায় পানির নিচে। পানির নিচে তো আর মানুষ হয়ে বেঁচে থাকা যায় না। বোন তাই হয়ে গেল শুশুক।
         শুশুক হয়ে বোন পানির নিচেই থাকে। শুধু এক-একবার ভেসে উঠে খোঁজে ভাই কাপড় নিয়ে ফিরল কিনা। তারপরেই ভুস করে ডুবে যায়।
        কবে যে ফিরবে ভাই!

০২.
যুদ্ধে যাওয়ার সময় শামসু বোনকে বলে গিয়েছিল- দ্যাশ স্বাধীন হলে তোর আর মায়ের কাপড়ের কষ্ট থাকবি না। ভাতের কষ্ট থাকবি না। তোর জন্যে আমি লাল শাড়ি আনব।
       বোন বলেছিল- লাল না। সবুজ শাড়ি আনিস ভাই। 
       ভাইয়ের তখন যাওয়ার তাড়া। সান্ত¡না দিয়ে বলেছিল আচ্ছা দুইডা শাড়িই আনব।
       তারপর ভাইয়ের অপেক্ষা করতে থাকে বোন।

       হাবিলদার মুনির ওস্তাদ একবারমাত্র শামসুর দিকে তাকিয়েই সাফ বলে দিয়েছিলÑ চলবো না। এই পোলারে যুদ্ধের মাঠে নামানো যাইব না।
    চব্বিশ বছর বয়সের শামসুর ওজন ৮০ পাউন্ড। শরীরের যে যে অংশে মাংস থাকলে সেগুলোকে মাসল বলা হয়, সেসব জায়গা সরু লিকলিকে, হাড় আর চামড়ার মাঝখানে কোনো পেশি আছে বলে মনে হয় না। উচ্চতা ৪ ফুট ৬ ইঞ্চি। একটা থ্রিনটথ্রি রাইফেল তাকে কাঁধে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে বলা হয়েছিল। সে দশ মিনিটও পারেনি রাইফেল বইতে। ট্রেনিং মাঠটা দশ পাক দৌড়াতে বলা হয়েছিল। সে একটার বেশি পাক দিতে পারেনি। হাবিলদার রেগে গিয়ে বলেছিলÑ ভাত-রুটি কুনোদিন খাও নাই বোধায়। সাগু-বার্লি খায়া বড় হইছো? যাও বাড়িত যাও! যুদ্ধ তোমার কাম না।
    শামসু বলতে চেয়েছিলÑ আমরা তো দিনে একবেলা খাওয়ার পাই। তাও রোজ না। খাওয়ার পাই না বলেই তো যুদ্ধ করতে আইছি। দ্যাশ স্বাধীন করলে খাওয়ার পাব।
    কিন্তু বলা হয়নি কথাগুলো। আবার ফিরেও সে যায়নি।  ফিরে যাওয়ার জন্য তো সে আসেনি। মুক্তিযুদ্ধ করবে বলে কত রক্ত আর লাশভর্তি খাল-নদী-সড়ক পেরিয়ে, কত পাহারা এড়িয়ে জান হাতে করে ইন্ডিয়ার ক্যাম্পে এসে পৌঁছেছে। জীবন থাকতে দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে নিজেদের ভিটেতে ফিরে যাবে না এই প্রতিজ্ঞা করে এসেছে। সেই তাকে যুদ্ধে নেওয়া হবে না! হত্যে দিয়ে পড়ে থাকবে সে।  সেক্টর কমান্ডারের পায়ে গড়াগড়ি যাবে দরকার হলে। কিন্তু যুদ্ধে সে যোগ দেবেই।
    সারারাত টিলার ধারে বসে কাটিয়েছে সে। মশার কামড় খেয়েছে। একবার একজন যুবক মুক্তিযোদ্ধা তাকে ডেকে বলেছিলÑ আমাগের তাঁবুতে এসে ঘুমান। এইভাবে মানুষ কী বসি থাকবার পারে সারারাত!
    কিন্তু রাজি হয়নি শামসু। সে শুনেছে সকালের সূর্য ওঠার সাথে সাথে সেক্টর কমান্ডার বেরিয়ে আসেন টিলার ওপরের তাঁবু থেকে। অন্য কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ার আগেই শামসু তার সামনে হাজির হবে নিজের আরজি নিয়ে। তাই ঘুমানোর কথা ভাবেইনি সে।
    
    তাকে দেখার সঙ্গে সঙ্গে শামসুর ভেতর থেকে বরাভয় শোনাল কেউ একজন তোমার বাসনা পূর্ণ হবে। 
    সেক্টর কমান্ডারকে দেখে উঠে দাঁড়াল শামসু। এগুতে শুরু করল তার দিকে। হঠাৎ-ই সেক্টর কমান্ডারের পেছন থেকে, বলা যেতে পারে, প্রায় শূন্য থেকে, উদয় ঘটল দুই ভারি অস্ত্রধারী সৈনিকের। তাদের অস্ত্র তাক করা শামসুর দিকে। মুখে বজ্রগম্ভীর ধমকÑ হল্ট! 
    নিজের অজান্তেই দুইহাত উপরে উঠে গেল শামসুর। পা দুটো কাঁপছে ঠক ঠক করে। পড়ে যাবে মনে হচ্ছে। কিন্তু সেই তীব্র জেদটা হঠাৎ-ই ফিরে এল তার মধ্যে। সে পড়বে না। ভয় পাবে না। সে দেশের জন্য যুদ্ধ করবে।
    শামসুর বুকের সঙ্গে প্রায় ঠেকে গেছে একটা অস্ত্রের নল। কিন্তু সেদিকে লক্ষ্যই নেই তার। সেক্টর কমান্ডারের দিকে তাকিয়ে স্থির নিষ্কম্প কণ্ঠে বলল- আমি মুক্তিযুদ্ধ করতে আইছি। হাবিলদার সাবে কয়, আমি যুদ্ধ করার উপযুক্ত না। কিন্তু যুদ্ধ আমি করবই। আপনার কাছে সেই মিনতি নিয়া খাড়ায়া আছি স্যার। 
    তার চোখের দিকে একমুহূর্ত তাকিয়ে রইল সেক্টর কমান্ডারের চোখ। শামসুর মনে হলো, এই এক মুহূর্তেই তার ভেতর-বাহির সবটুকু পড়ে ফেলেছেন তিনি। বডিগার্ডদের একজনের দিকে তাকিয়ে মাথাটা একপাশে সামান্য কাত করলেন। বডিগার্ড অস্ত্র সরিয়ে নিল শামসুর বুক থেকে। বললÑ সকাল নয়টার সময় ক্যাম্পের মাঠে হাজির থেকো। 


সেই শামসু যুদ্ধ শেষ হবারও তিনদিন পরে এক সন্ধ্যায় সারা গা ভর্তি খোস-পাচড়া, মাথায় ঝাঁকড়া চুলভর্তি উকুন, ঘাম আর ময়লায় ভারি হয়ে যাওয়া পরনের লুঙ্গি, চটের বস্তায় ছয়টা গ্রেনেড আর কাঁধে ঝোলানো বন্দুক নিয়ে বাড়ির কাছের ঘাটে নৌকা থেকে নামল। সন্ধ্যা নামতে না নামতেই ভূতুরে আঁধার নেমে এসেছে চারপাশে। কিন্তু অস্বস্তি নেই। ভয় ভয় ভাবটা নেই। কেন নেই? উত্তর খোঁজে শামসু। নিজেই বলেÑ দ্যাশ স্বাধীন হইছে। তাই কুনো ভয়-ডর কারো নাই।
কিন্তু এত শুনশান কেন পুরো এলাকা? কুকুর পোষার আদিখ্যেতা করাটা গ্রামের মানুষের পোষায় না। তাই গাঁয়ের সবগুলো কুকুরই পথের কুকুর। তারা ঘুরে ঘুরে নিজেদের খাবার জোগাড় করে। আবার কোনো বাড়ির লোক কোনো কুকুরকে নিজেদের কুকুর না বললেও এঁটোকাঁটা খেতে দেয় সবাই। তাই গ্রাম পাহারার কাজটা কুকুররা করে ভালোভাবেই। রাত-বিরেতে অচেনা লোকের গন্ধ পেলেই তেড়ে যায় সবাই মিলে।
          কিন্তু গাঁয়ের ভেতর দিয়ে মাইলখানেক রাস্তা হেঁটেও এখন পর্যন্ত কোনো কুকুরের ডাক শোনেনি শামসু। ব্যাপারটা খুব অস্বাভাবিক ঠেকে তার কাছে। কুকুরগুলোকেও কি পাক মেলেটারিরা মেরে ফেলেছে? যাতে তাদের আসার সংবাদ দিতে না পারে গাঁয়ের মানুষকে? 
         কিছুক্ষণ পরে শব্দ আসে। ছনের ঘর থেকে বিলাপের শব্দ আসে। সেদিকে এগিয়ে যায় শামসু। মনে হয় মোতালেব চাচার ঘর ছিল সেটি। কাছে গিয়ে দেখতে পায় ঠিকই। একটামাত্র কুপি জ্বলছে ঘরে। তার থেকে এক চিলতে আলো ছিটকে এসে পড়েছে বারান্দায়। শামসু বারান্দায় উঠে গলা খাঁকারি দেয়। থেমে যায় ভেতরের বিলাপ-কান্না। শামসু জানতে চায়Ñ মোতালেব ভাই আছো?
       বেরিয়ে আসে মোতালেবের বুড়ি মা। বিলাপ করছিল সেই বৃদ্ধাই। কাছে এসে জানতে চায়Ñ কে?
       আমি শামসু।
       কোন শামসু?
       এই প্রশ্নের কী উত্তর দেবে ভাবতে শুরু করার আগেই তার মুখ থেকে উত্তর বেরিয়ে যায় যুদ্ধে যাওয়া শামসু।
       তার নাম শুনেই ডুকরে ওঠে মোতালেবের মাÑ বাপ শামসু রে! এতদিন পরে আসলু তুই! যুদ্ধের সময় কোন মুল্লুকে আছিলু রে বাপ! রোজ আসতিছিল ইয়াহিয়ার মেলেটারি। মারতিছিল সামনে যারে পায়।  আমরা খালি দোয়া করতিছিলাম আমারে শামসু ক্যান আসে না! সে থাকলে মেলেটারিগুলানেক দোজখে পাঠাতে পারবি। সেই তুই আসলু বাপ! কিন্তু সব শ্যাষ! 
        সব শ্যাষ!
        শামসুর মাথা ঘুরে ওঠে। আমার মা? আমার বইন?
        মোতালেবের মা উত্তর করে না।
        শামসু আকুল হয়ে আবার মা-বোনের কথা জানতে চায়।
        তখন উত্তর আসে তোর মায়ের লাশ উঠানে পড়্যা আছিল। আর তোর বইন দৌড়ায়া ঝাঁপ দিছিল বিলের পানিত। বিল ছাড়া যৈবতী মিয়্যার লুকানোর জায়গা তো আর নাই রে বাপ।

        বাড়ির পথে না গিয়ে শামসু দৌড়াতে শুরু করে চলনবিলের দিকে। তার বইনডাও কী ভাইয়ের জন্য অপেক্ষা করতে করতে শুশুক হয়ে গেছে!  

জা,ই

সর্বশেষ