শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ , ৫ বৈশাখ ১৪৩১

modhura
Aporup Bangla

গল্প।।  বিজয় দিবস

শিল্প-সাহিত্য

পপি পারমিতা

প্রকাশিত: ১৬:৩৮, ১২ ডিসেম্বর ২০২২

আপডেট: ১৬:৩৯, ১২ ডিসেম্বর ২০২২

সর্বশেষ

গল্প।।  বিজয় দিবস

অলংকরণ : জীবন শাহ

অগ্রহায়ণ মাস ৷ তারিখ জানা নেই ৷ শীতের সূচনা ৷ এদেশের বেশি সংখ্যক মানুষ বাঙলা মাস গননা করে শীতের আগে পরে। পৌষ মাঘ শীত কাল কথা ওই এটুকুই ৷  মাঝে অবশ্য পহেলা বৈশাখ, কাঁশফুল ইত্যাদি আছে ৷ আর সারা মাস চলে ইংলিশ মাসের ক্যালেন্ডার ৷ বারো বছরের হৃদয়ের অল্প হিসাব ৷ বাংলা ইংলিশ অংক ৷ মা বলেন, এবার নাকি এখনও শীত পড়েনি! প্রতি বছর এমন সয় শীত জেঁকে বসে ৷ এমন সময় বলতে এটা নভেম্বর মাস ৷ নভেম্বরের শুরুতেই নাকি শীত লাগে শরীরে ৷ মা বলেন, নভেম্বর মাসের কুড়ি তারিখ হয়ে গেল, এবার এখনও শীত পড়েনি ৷
   শীত জেঁকে বসে, এই কথাটা কঠিন মনে হয় হৃদয়ের কাছে ৷ এর মানে সহজ কথা হচ্ছে, গরম উলের সোয়েটার যেমন গায়ে খাপে খাপ লেগে থাকে, শীতও তেমন জাঁকিয়ে বসে ৷ কোনো কোনো রাতে জোঁকের মতো শরীর কামড়ে ধরে শীত!
    হৃদয়ের বাপ রিকসা চালক ৷ এই শহরের লোকে বলে রিশকা ৷ রিকসা ওয়ালার নাবালক ছেলে শহর দেখেনি ৷ ও দেখেছে নিজের ঘরের আশপাশ ৷ প্রায় প্রতিটি ঘরের ছাদে উড়ছে পতাকা ৷ ভিন দেশি পতাকা ৷ বিশ্বকাপ ফুটবলতো শুরু ৷ যে যেই দলের সমর্থক সেই দেশের পতাকা নিজের ঘরের উপরে লাগিয়েছে ৷ ওই পতাকাগুলো যখন বাতাসে ওড়ে, তখন হৃদয়ের শীত করে! 
     হৃদয় ঘরের দুয়ারে দাঁড়িয়ে সেই পতাকার দিকে তাকিয়ে থাকে ৷ একদিন গরিব রিক্সা চালক বাবা বলেন,
আমরা ভাত খেথে ভাত পাই না!বিদেশী পতাকা কেনা আমার কাজ না ৷ হৃদয়ের বাপ চলে যাচ্ছিলেন, কী মনে করে আবার পেছনে ঘুরে ছেলের কাছে এলেন, ছেলেকে সতর্ক করলেন- তুমি খেলা দেখবে নিজের ঘরে বসে ৷ বাড়িওয়ালার ছেলের সাথে ফুটবল খেলা নিয়ে আলোচনা করবে না ৷ কারণ ওরা যে দল সমর্থন করে তুমিতো সেই দল সমর্থন করে না ৷
হৃদয়ের বাপ ছেলের জন্য ঘরে টেলিভিশন কিনে এনেছিলেন ৷ মাসিক কিস্তিতে সেই টাকা শোধ করেন ৷ কিন্তু ঘর কেনাতো সম্ভব নয় ৷ পরের ঘরে সেই স্বাধীনতা থাকে না ৷ ঘর নিজের না হোক, দেশতো নিজের ৷ বাবার কাথায় ছেলের মন খারাপ হয় না ৷ কারণ বাপতো আর সবটা জানেন না! শীততো প্রায় চলেই এলো, ভোর রাতে হৃদয়ের ঠান্ঠা লাগে ৷ আহা! ঘরে যদি একটা বাড়তি চাদর থাকত, হৃদয় গায়ে জড়িয়ে আরামে ঘুমুতে পারতো ৷ খেলার দেশের পতাকা দেখে হৃদয়ের শুধু সে কথাই ভাবনায় আসে ৷

হৃদয় যে বিশাল উড়ন্ত পতাকাটার দিকে তাকিয়ে ভাবে, সেটা বাড়িওয়ালাদের ৷ আট তলা বিশাল দালানের ছাদের উপর বিশাল সাইজের পতাকা ৷ বাড়িওয়ালারা এখন হৃদয়দের সামনের ঘরটাতেই থাকেন ৷ টিন ঘর ৷ আট তলার নির্মাণ কাজ শেষ হলে ওরা ওই বাড়িতে উঠে যাবে ৷
   কিন্তু কোথায় পেল ওরা অত টাকা? আর হৃদয়ের বাপযে বলে "আমি ভাত খাইতাম ভাত পাই না" !  কেউ পেট ভরে খাবে আর কেউ খাবে না এটা কেমন কথা?  কেমন নিয়ম এটা? দেশতো একটাই! আমার দল, তোমার দল কেন? আনন্দতো সবার ৷ অধীকারতো সবার ৷
  মা বলেন, বঙ্গবন্ধু থাকলে নাকি এমনটা হতো না ৷ এমন দূর্নীতি হতো না ৷ সর্বত্র বিরাজ করতো এক নীতি ৷ হৃদয়ের মা বলেন, এ দেশের মানুষের দুই টা দল ৷ তুমি যদি তোমার পছন্দের দলের কথা বলো,
তাহলে বাড়িওয়ালারা আমাদের ঘর ছাড়ার নোটিশ দেবে ৷ আমরা এখানে আর থাকতে পারবো না ৷ এমনও হতে পারে ওরা তোমার গায়ে হাত তুলবে ৷ পেটাবে তোমাকে ৷  সবাই দুইটা করে পতাকাা উড়িয়েছে কেন মা?
  এ দেশে একটা যুদ্ধ হয়েছিল ৷ মুক্তির জন্য যুদ্ধ ৷ বেঁচে থাকার জন্য যুদ্ধ ৷ যুদ্ধে আমাদের জয় হয়েছিল ৷ এটা সেই বিজয়ের পতাকা ৷  বিদেশী পতাকার সঙ্গে অবশ্যই নিজেদের দেশের পতাকা উড়াতে হয় ৷ সম্মান আর ভালোবাসা প্রদর্শনের জন্য ৷

   ভাবতে ভাবতে কিছুদিন পার হয় ৷ আজকে সেই দিন ৷ আজই করবে হৃদয় সেই কাজটা ৷ দুপুর বেলা নির্জন সময় ৷ উঁচু দালানের নির্মাণ শ্রমিকেরা সবাই খাবার বিরতিতে গেছেন ৷ গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে উর্ধ্বশ্বাসে সিঁড়ি বেয়ে ছুটে উঠে যায় হৃদয় ৷ বিশাল বড় ভিনদেশি পতাকাটা খুলে ফেলে ৷ সেটি ভাঁজ করে নিজের পকেটে ঢুকিয়ে নেয়য ৷ একটা স্বস্তি! রাতে আরামে ঘুমুবে আজ ৷ 
      ফেরার সময় হৃদয় লক্ষ্য করে, চারিদিকটা একেবারেই নিরিবিলি ৷ কোথাও কোলাহল নেই ৷ সব দোকানপাট বন্ধ ৷ আজ ছূটির দিন ৷ ষোলাই ডিসেম্বর ৷ বিজয় দিবস ৷ 
     হৃদয় চোখ তুলে দেখে উঁচু দালানের দিকে ৷ সেখানে উড়ছে একটি পতাকা ৷ গৌরবের লাল সবুজ পতাকা ৷
 

জা,ই

সর্বশেষ

জনপ্রিয়