শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ , ৫ বৈশাখ ১৪৩১

modhura
Aporup Bangla

আমরা সাবধান না হলে দুর্ভিক্ষ হবেই

সাক্ষাৎকার

অপরূপ বাংলা প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২০:৩০, ৩ নভেম্বর ২০২২

সর্বশেষ

আমরা সাবধান না হলে দুর্ভিক্ষ হবেই

 ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর  ও ইস্ট-ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির  সাবেক উপাচার্য  ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেছেন, গত কয়েক বছরে দেশে পণ্য আমদানি যেমন কমেছে, আবার কতগুলো খাদ্যদ্রব্যের উৎপাদনও কমেছে। প্রধানমন্ত্রী মূলত এ কথাটাই বলেছেন। তিনি বোঝাতে চেয়েছেন যে, আমাদের আরও ইফোর্ট (জোগান) দিতে হবে। শত প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও বাড়াতে হবে উৎপাদন।

প্রধানমন্ত্রী মূলত গোটা পৃথিবীর কথা আমলে নিয়ে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশ তো পৃথিবীর বাইরের কোনো রাষ্ট্র নয়। প্রভাব তো পড়বেই। আমরা সাবধান না হলে দুর্ভিক্ষ হবেই।

তিনি বলেন, প্রকৃতি নামের মাকে যদি আমরা রক্ষা করতে পারি, তাহলে প্রকৃতিই আমাদের রক্ষা করবে। প্রকৃতির ওপর আমাদের মায়া বাড়াতে হবে। সব রোবট বা মেশিন দিয়ে করতে হবে, এই নীতিও ছাড়তে হবে। 


মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, বৈশ্বিক সংকট তো দৃশ্যমান। তবে আমরা যারা দেশি-বিদেশি ভাষ্যকর এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করছি, তারা বেশ কিছু সূচক আমলে নিয়ে বলছি। আমরা সবাই বলে এসেছি, যারা আমাদের অবস্থান শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার বা পাকিস্তানের সঙ্গে তুলনা করেন, তাদের কোনো ধারণা নেই। আমাদের অবস্থান অবশ্যই শক্তিশালী। আমাদের অর্থনীতির স্তম্ভ অনেক বেশি শক্তিশালী।

আমাদের নেতৃত্বে কিছুটা ভুল-ত্রুটি আছে বটে। যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাদের দলেও সমস্যা আছে। কিন্তু সত্যিকার অর্থে আমাদের সামগ্রিক নেতৃত্ব খুব মজবুত।

গোটা পৃথিবীতে উৎপাদন কমছে। আর রাশিয়া-ইউক্রেনের অর্থহীন এই যুদ্ধ পৃথিবীর খাদ্য উৎপাদন এবং সরবরাহ আরও কমিয়ে দিয়েছে। ইউক্রেনের যুদ্ধটা কারা সাজিয়েছে এবং কেন এভাবে ধ্বংসের খেলায় মত্ত হলো তাই বুঝতে পারলাম না।

কেউ না কেউ তো এই যুদ্ধ সাজিয়েছে। যারা অস্ত্রের ব্যবসা করেন, তাদের জন্য যুদ্ধ আশীর্বাদ। যুদ্ধই তাদের লাভ। যুদ্ধবাজরা এর বাইরে পৃথিবীকে দেখতে চায় না।

তিনি বলেন, আমেরিকা এখানে একক ভূমিকা পালন করছে- এমনটি বললে একতরফা বলা হবে। যুদ্ধটা শুরু করেছে রাশিয়া। এখানে রাশিয়া-আমেরিকা সমানভাবে দায়ী। দায় অন্যদেরও আছে। যুদ্ধ লাগানো সহজ। কিন্তু থামানো বড় কঠিন। এই যুদ্ধে পৃথিবীতে কী পরিমাণ ক্ষতি হচ্ছে, তা দুটি শিবির কোনোভাবেই বুঝতে চেষ্টা করছে না।


আমাদের জমি এখনো উর্বর আছে। এখানকার কিষাণ-কিষাণি খাদ্য উৎপাদন করেই যাচ্ছে শত সমস্যার মধ্যে। শ্রমজীবী মানুষ কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছে। তাদের আমরা ভর্তুকিটা অব্যাহত রাখতে পারলে উৎপাদন আরও বাড়ানো সম্ভব।

মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, যখন ডিজেলের দাম বাড়ানো হলো আমি এর তীব্র বিরোধিতা করেছি। এখনো আমি বিরোধিতা করছি। ডিজেল দিয়ে আপনি মালামাল পরিবহন করেন। ডিজেল দিয়ে আপনি বিদ্যুৎ উৎপাদন করছেন। আপনাকে এসবের বিকল্প ভাবতে হবে।

আবার বৈশ্বিক পরিস্থিতিও বুঝতে হবে। এর আগে আমাদের নিজেদের শোধরাতে হবে। শ্রমজীবী মানুষ যেন বেশি করে কাজ করতে পারে এবং তার শ্রমে মূল্যায়ন যেন যথার্থ হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। অর্থপাচার, মানিলন্ডারিং ঠেকাতে হবে। এখানে ব্যবস্থা নিতে হবে। অর্থ পাচারকারীর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। মানিলন্ডারিং, ঋণখেলাপি, করখেলাপি- এই তিনটির বিষয়ে সরকারকে আরও সজাগ হতে হবে। এগুলো একই সূত্রে গাঁথা। এসবে ব্যবস্থা নিলে আসন্ন সংকট আমাদের কাছে তুচ্ছ মনে হবে।

আমাদের গণমাধ্যমে সংকটের কথা বড় করে দেখানো হয়। এর মানে এই নয় যে, আমি সমস্যাকে খাটো করে দেখাতে চাইছি। সমস্যা আছে। কিন্তু সমাধানও আছে। ভয় বেশি দেখানো হলে মানুষ শক্তি হারায়। মানুষ প্রকৃতির কাছে ফিরুক, দুর্ভিক্ষ হবে না। সবার উপরে মানুষ সত্য, তার উপরে নেই। কৃষকের, শ্রমিকের উপযুক্ত সম্মান দিতে হবে। প্রয়োজনে খাদ্য উৎপাদনে আরও ভর্তুকি দিতে হবে। সাম্যবাদ ফিরিয়ে আনতে হলে শ্রমের মূল্য দিতেই হবে। উৎপাদন, পরিবহন আর বিপণনে শ্রমিকের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এজন্য সমবায় জরুরি। তাহলে মধ্যস্বত্বভোগীর খবরদারি দূর হবে।

আমাদের কৃষকরা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি শ্রম দিয়ে আসছে। কিন্তু কৃষকরা তার শ্রমের মূল্য পায় না। আমাদের এখানে এক শতাংশ লোকের কাছে ৭০ শতাংশ সম্পদ। আর দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশে এক শতাংশ লোকের কাছে ২০ শতাংশ সম্পদ রয়েছে। (সম্প্রতি জাগো নিউজ ২৪ ডটকমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন এসব কথা বলেন)। 

জা,ই

সর্বশেষ

জনপ্রিয়