শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ , ১৪ চৈত্র ১৪৩০

modhura
Aporup Bangla

আত্মহত্যা প্রতিরোধে পূর্ব সচেতনতা জরুরি

লাইফস্টাইল

অপরূপ বাংলা প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৭:৩৬, ২৮ জানুয়ারি ২০২৩

সর্বশেষ

আত্মহত্যা প্রতিরোধে পূর্ব সচেতনতা জরুরি

ছবি- ইন্টারনেট

আত্মহত্যা সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হলেও এই আত্মহত্যা সম্পূর্ণ প্রতিরোধ করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, এ বিষয়ে পরিবারের সচেতনতা জরুরি। পাশাপাশি বয়ঃসন্ধিকালে কিশোর-কিশোরীদের সঙ্গে কি ধরনের আচরণ করতে হয় তা আমাদের অনেক বাবা-মা-ই জানেন না। তাছাড়া পারিবারিক কলহ, বাবা-মায়ের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ, পরিবারে সন্তানকে হেয় করা, অন্যের সঙ্গে তুলনা করা—এসব বিষয় কিশোর-কিশোরীদের মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ফলে নিজেদের ওপর থেকে আত্মবিশ্বাস হারিয়ে যায়।

একটু খেয়াল করলে কাছের বন্ধু বা স্বজনরা এসব বিষয় বুঝতে পারে। তখন খোলামেলা কথা বলতে পারলে সময় দিলে আত্মহত্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব। মনোবিজ্ঞানী অধ্যাপক ডা. মোহিত কামাল বলেন, যখন শিক্ষার্থীরা হতাশাগ্রস্ত হয়, বিষণ্নতায় ভোগে, যারা পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারে না, তারাই বেশি আত্মহত্যা করে। জটিল পরিস্থিতি কঠিন পরিস্থিতি, চাপযুক্ত পরিস্থিতি তারা যদি মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয় তখন আত্মহত্যার দিকে এগিয়ে যায়। তিনি বলেন, ব্রেক আপ, তরুণ প্রজন্মের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করতে না পারা, ভালো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে না পারা, শিক্ষার্থীর কাছে দুটো বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ। টিন এজ যারা, তারা ক্রাশ খায়। আর ক্রাশ খেলে বাবা-মা সন্তানকে ঘরে বন্দি করে ফেলে, মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়, ওয়াই ফাই কানেকশন বন্ধ করে দেয়, স্কুল-কলেজে যেতে দেয় না, তাদেরকে এক ধরনের বন্দি করে ফেলে। কিন্তু তার অন্য আরেক জনের প্রতি আকর্ষণ, তার সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছে করে, দেখতে ইচ্ছে করে, না পারলে অশান্তি লাগে, সবকিছু চুড়মার করে ফেলতে ইচ্ছে করে।

মা-বাবা বিরোধীপক্ষ হয়ে যায়। মা-বাবাদের জ্ঞানের অভাবে, টিন এজ সন্তানদের কীভাবে ম্যানেজ করতে হয়, তা বুঝতে পারে না। কিছু ক্ষেত্রে মেয়েরা আনওয়ান্টেড প্রেগন্যান্ট হয়ে যায়, বলতে পারে না, তখন আত্মহত্যা করে ফেলে। একটা গ্রুপ আছে, যারা মাদক খেয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আত্মহত্যা করে ফেলে। এসব সমস্যা সমাধানে এই মনোবিজ্ঞানী বলেন, কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে সঠিকভাবে ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্য গড়ে তুলতে হবে। নিজেকে বিশ্বাসী করে গড়ে তুলতে হবে। সেজন্য পারিবারিক বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ।

আমাদের সন্তানকে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে তৈরি করতে হবে। বাচ্চাদের সবকিছু করে দেওয়া উচিত নয়, তাহলে তারা নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। খাবার থেকে শুরু করে, পোশাক পরিয়ে দেওয়া, স্কুলের নোট করে দেওয়া, এসব করে দিলে তারা আত্মনির্ভরশীল হতে পারে না। তারা জটিল পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারে না। তাকে হেয় করা যাবে না, অন্যের কাছে অপমান করা যাবে না। স্বামী-স্ত্রীর বাগিবতণ্ডা, ডিভোর্স-সেপারেশন এসব ক্ষেত্রেও বাচ্চার মন ভেঙে যায়। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক তাহমিনা ইসলাম বলেন, আত্মহত্যাকারী স্কুল ও কলেজগামী শিক্ষার্থীরা তাদের জীবদ্দশায় নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হন—যা মোকাবিলা করতে না পারায় তারা আত্মহননের পথে ধাবিত হয়।

জরিপে উঠে আসা এমনই বেশ কিছু কারণের মধ্যে দেখা যায়, মান-অভিমান তাদেরকে সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যাপ্রবণ করে তোলে। ২৭.৩৬ শতাংশ স্কুল ও কলেজ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে অভিমান করে। এদের বড় অংশেরই অভিমান হয়েছে পরিবারের ওপর। অন্যান্য কারণের মধ্যে রয়েছে প্রেমঘটিত কারণ। তবে স্কুল ও কলেজ শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার কারণ হিসেবে আরও বেশ কিছু ভিন্ন কারণও আমরা পেয়েছি। তার মধ্যে রয়েছে আপত্তিকর ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ায়, শিক্ষক কর্তৃক অপমানিত হওয়া, গেইম খেলতে বাধা দেওয়া, পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া, মোবাইল ফোন কিনে না দেওয়া, মোটরসাইকেল কিনে না দেওয়া ইত্যাদি। ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট শাহরিনা ফেরদৌস বলেন, ২০২২ সালের এক জরিপে দেখা গেছে, ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে আত্মহননের প্রবণতা অনেক বেশি।

অর্থাৎ তারা যে বয়ঃসন্ধিকালের সময়টি পার করছে এটি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ এবং এ সময়ে কিশোর-কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন এবং সচেতনতা তৈরির কোনো বিকল্প নেই। এছাড়া রোগী দেখার সময় আমি দেখেছি, কোভিড-১৯ এর একটি বড় প্রভাব পড়েছে আমাদের বয়ঃসন্ধিকালীন জনসমষ্টির ওপর।

আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তানসেন রোজ বলেন, শিশু-কিশোরদের মন সাধারণত ভঙ্গুর প্রকৃতির হয়। এ বয়সে ছোট ছোট বিষয়গুলোও তাদেরকে আন্দোলিত করে। বয়ঃসন্ধিকালে মানসিক বিকাশের সঙ্গে অনেকেই খাপ খাওয়াতে পারে না। ফলে তাদের প্রত্যাশার ক্ষেত্রে ছোটখাটো ঘাটতিও তাদেরকে আত্মহত্যার মতো বড় সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করে। এ সমস্যা থেকে উত্তরণের পথ নিয়ে তানসেন বলেন, আত্মহত্যা প্রতিরোধে আমাদের শিক্ষক এবং বাবা মায়েদের সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করতে হবে।

এনসি/

সর্বশেষ