শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ , ১৪ চৈত্র ১৪৩০

modhura
Aporup Bangla

ভিটামিন-ডি পেতে রৌদ্রস্নান

লাইফস্টাইল

অপরূপ বাংলা প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৭:৩৯, ২৪ ডিসেম্বর ২০২২

সর্বশেষ

ভিটামিন-ডি পেতে রৌদ্রস্নান

ছবি- ইন্টারনেট

রোদে যাব, নাকি যাব না? গেলে কতক্ষণ থাকলে শরীরে ভিটামিন ‘ডি’ তৈরি হবে? ঘরে থেকে এমন চিন্তা কম-বেশি সবার মনেই আসে। যার কারণও আছে। এই যেমন রোদের ক্ষতিকারক আলট্রা ভায়োলেটে ত্বক পুড়ে যেতে পারে, অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে। তবে একটা নির্দিষ্ট সময়ের রোদ ত্বকের দারুণ উপকারে আসে।

 

ভিটামিন-ডি কতটা জরুরি

মূলত হাড়, দাঁত ও মাংসপেশির স্বাস্থ্যরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ভিটামিন-ডি। ক্যানসার প্রতিরোধ, হৃদ্‌রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, মাল্টিপল স্কেলেরোসিসসহ আরও কিছু রোগ প্রতিরোধে এর বেশ ভূমিকা রয়েছে। ইনসুলিনের মাত্রা ঠিক রেখে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে এটি সাহায্য করে। এ ছাড়া এই ভিটামিন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের সুস্থতার জন্য যথেষ্ট সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। বর্তমান করোনা মহামারিকালে প্রতিটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করা খুব জরুরি। তাই এই ভিটামিনের সমতা রক্ষার কথা বলা হচ্ছে বেশ জোরেশোরে এবং তা বিশ্বজুড়ে।

প্রধান উৎস সূর্যালোক

ভিটামিন-ডি’র প্রধান উৎস সূর্যালোক। রৌদ্রস্নান তাই খুব দরকার। এ ছাড়া কলিজা, ডিমের কুসুম, দুধ ও দুগ্ধজাত খাদ্য, ছানা, পনির, মাখন, সামুদ্রিক মাছের তেল, সামুদ্রিক মাছ টুনা, স্যামন, ম্যাকারেল, সারডিন, কিছু মাশরুম আর ভিটামিন-ডি-সমৃদ্ধ গুঁড়া দুধ, কমলার শরবত, সাপ্লিমেন্টারি ইত্যাদিতে ভিটামিন-ডি পাওয়া যায়।

ভিটামিন-ডি শুধু নিরেট ভিটামিন নয়, বরং এটিকে বলা যায় হরমোন প্রাণরস। সূর্যরশ্মির পরশ দেহে লাগলে তখন ত্বকের নিচে তৈরি হয় ভিটামিন-ডি’র প্রাথমিক যৌগ। সাধারণত ৫০-৯০ শতাংশ ভিটামিন-ডি তৈরি হয় সূর্যালোক থেকেই। সূর্যের আলোকছটায় থাকে বিভিন্ন তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের আলো। সাধারণত ২৯০-৩১৫ ন্যানোমিটার তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের আলোকরশ্মি জোগান দেয় ভিটামিন-ডি। এই তরঙ্গের আলোক ঢেউয়ের আরেক নাম আলট্রাভায়োলেট-বি, বাংলায় যার নাম অতিবেগুনি রশ্মি-বি।

যেভাবে রূপান্তর ঘটে ভিটামিনের

ত্বকের নিচে আলোর ছোঁয়ায় তৈরি ভিটামিন-ডি। কিন্তু কাঁচা ভিটামিন, বলা যায় এই ভিটামিনের প্রথম ধাপ। এটাকে বলা যেতে পারে প্রাক-ভিটামিন-ডি। এই ত্বক কারখানায় উৎপন্ন যৌগটিকে রক্ত এসে বহন করে নিয়ে যায় বিশাল এক কারখানায় লিভারে। এখানে রূপান্তর ঘটে ভিটামিনের। তখন এর নাম হয় ক্যালসিডিয়ল। রক্তে ভিটামিন-ডির মাত্রা বলতে বোঝায় ক্যালসিডিয়লের মাত্রা। এই যৌগটি নিষ্ক্রিয়, যা রক্তবাহিত হয়ে পৌঁছে যায় কিডনিতে। কিডনি এই যৌগটিকে আরও শাণিত করে। তখন এর নাম হয় ক্যালসিট্রায়ল। এটি মোক্ষম, কার্যকরী, শাণিত ভিটামিন-ডি।

সূর্যস্নান করুন সরাসরি

ভিটামিন-ডি কাচ ভেদ করে দেহে প্রবেশ করতে পারে না। ফলে কেউ যদি আয়েশ করে ঘরের ভেতর বসে কাচের জানালার ফাঁক গলে নেমে আসা সূর্যরশ্মিতে স্নান সারতে চান, তারা বঞ্চিত হবেন এই ভিটামিন প্রাপ্তি থেকে। আবার সূর্যস্নানের জন্য সমুদ্রসৈকতে আরামকেদারায় শুতে হবে এমনটিরও দরকার নেই। দরকার শুধু পর্যাপ্ত সূর্যালোক সরাসরি দেহে লাগানোর ব্যবস্থা করা। তবে পাহাড়ের চূড়ায় ভিটামিন-ডি বেশি থাকে বলে জানা গেছে।

গ্রীষ্মের রোদ বেশি ভালো

গ্রীষ্মের রোদ যতটা ভিটামিন-ডি তৈরি করে শীতের রোদ ততটা পারে না। সে জন্য গ্রীষ্মের রোদে ১৫ মিনিট থেকে ঘণ্টা দুয়েক হিসাবে সপ্তাহে দুই দিন দেহে রোদ লাগালে যথেষ্ট পরিমাণে ভিটামিন-ডি মিলবে। যারা ভিটামিন-ডি নিয়ে গবেষণা করেন তারা বলেন, রোদে যেতে হবে সকাল ১০টা থেকে ৩টার মধ্যে। তবে ঠিক কত সময় এই ত্বকের কারখানায় ভিটামিন তৈরি হবে তা নির্ভর করে বেশ কিছু ফ্যাক্টর বা নিয়ামকের ওপর। যেমন ব্যক্তির অবস্থান, ঋতুভেদ, দিনের কোন অংশের আলো, আকাশের অবস্থা (মেঘাচ্ছন্ন, কুয়াশা), বায়ুদূষণ, চামড়ার তারতম্যসহ অনেক কিছুর ওপর।

তির্যক আলোয় নয়

বিষুবরেখা থেকে যত দূরে যাওয়া যাবে, সূর্যের আলো কিন্তু তত তির্যকভাবে পড়তে থাকবে দেহে। আর তির্যকভাবে আলো পড়লে অতিবেগুনি রশ্মি-বি দেহে লাগবে কম পরিমাণে। অর্থাৎ ভিটামিন-ডি তৈরি হবে কম। গ্রীষ্মে পৃথিবীর আবর্তনের ফলে বিষুবরেখা থেকে দূরবর্তী অঞ্চলে সূর্য অনেকটা খাড়াভাবে পতিত হয়। ফলে শীতকালের তুলনায় তখন সেখানে ভিটামিন-ডি তৈরি করে প্রচুর পরিমাণে।

দেহ খোলা রেখে সূর্যস্নান করুন

খুব অল্প সময়ে মানুষের ত্বকে তৈরি হতে পারে ১০,০০০-২৫,০০০ আই ইউ (ভিটামিন-ডি পরিমাপের একক) ভিটামিন-ডি। এ জন্য প্রতিদিন সূর্যের আলো গায়ে লাগানো যেতে পারে। তবে আলোয় যাতে শরীর পুড়ে না যায় সে ব্যবস্থাও করতে হবে। সাধারণত সূর্যের আলোয় ত্বক বা চামড়া পুড়তে যত সময় লাগে তার অর্ধেক সময়েই তৈরি হয় ভিটামিন-ডি। তাই রোদ চশমা, সুতির জামা-কাপড় পরলেও ক্ষতি নেই। হাত, পা, মুখ খোলা থাকলেই চলবে। এতে যতটুকু আলোর পরশ মাখবে তাতেই উৎপন্ন হবে প্রয়োজনীয় ভিটামিন-ডি।

আবার সম্পূর্ণ পিঠ উন্মুক্ত করে রাখলে যতটুকু ভিটামিন ডি তৈরি হবে, শুধু হাত-পা খোলা রাখলে তৈরি হবে তার চেয়ে অনেক কম। সূর্য যখন হেলে রশ্মি ছড়ায় তখন আলট্রাভায়োলেট-বি থাকে খুব কম। সে জন্য সকাল বা বিকেলের রোদ ভিটামিন-ডি প্রাপ্তির জন্য মোটেও মোক্ষম সময় নয়। সহজভাবে বলতে গেলে, আপনার ছায়া যখন আপনার চেয়ে বড় থাকে তখন নয়, বরং ছায়া যখন ছোট থাকবে তখনই যান রৌদ্রস্নানে। এতে কাজ হবে ত্বকের কারখানায়; উৎপন্ন হবে পর্যাপ্ত ভিটামিন-ডি।

শ্বেতাঙ্গদের জন্য সুখবর

ত্বকের রঙের সঙ্গে সূর্যের খানিকটা পক্ষপাত রয়েছে। শ্বেতাঙ্গ আর কৃষ্ণাঙ্গদের এখানেও পার্থক্য। শ্বেতাঙ্গদের ত্বকে সূর্যের পরশে অল্প সময়েই তৈরি হয় ভিটামিন-ডি, অথচ কৃষ্ণাঙ্গদের কিছুটা বেশি সময় লাগে। কেননা তাদের ত্বকে থাকে অনেক বেশি মেলানিন। এ জন্য আফ্রিকা, ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ কিংবা দক্ষিণ এশিয়ার অধিবাসীদের ভালো ভিটামিন-ডি পেতে বেশি সময় রৌদ্রস্নান করতে হবে।

মেলানিন হলো এক ধরনের রঞ্জক পদার্থ, যার আধিক্যে ত্বক কালো হয়। মেলানিন ভিটামিন ডি তৈরির প্রাথমিক উপাদানের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয় আলোকরশ্মি গলাধঃকরণ করতে। ফলে অধিক মেলানিন-সমৃদ্ধ কালো মানুষকে বেশিক্ষণ রৌদ্রস্নানে থাকতে হয় ভিটামিন-ডি তৈরি করতে। অবশ্য কালো মানুষের অন্য সুবিধাও আছে। বেশি রোদে পুড়লেও এই কালো মানুষের ত্বকে কর্কট রোগ বা ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে, যা শ্বেতাঙ্গদের ক্ষেত্রে বেশি থাকে।

দরকার নির্মল পরিবেশ

দূষিত বায়ু ভিটামিন-ডি তৈরি করতে পারে না। বায়ুদূষণের কারণে অতিবেগুনি রশ্মি-বি বায়ুতে শোষিত হয়; কিংবা প্রতিবিম্ব হয়ে মহাশূন্যে ফেরত চলে যায়। সে কারণে যেসব স্থানে বায়ুদূষণের মাত্রা বেশি, সেখানকার মানুষের ত্বক ভিটামিন তৈরিতে বাধা পায়। তাই বসবাসের পরিবেশ যেন দূষিত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা উচিত।

সবাই করুন রৌদ্রস্নান

যারা গৃহবন্দি কিংবা ধর্মীয় ও সামাজিক কারণে বাইরে বের হন কম, কিংবা বেরোলেও পোশাকে সর্বাঙ্গ ঢেকে রাখেন, তাদের ভিটামিন-ডির ঘাটতি হওয়ার আশঙ্কা প্রবল। যারা বয়োবৃদ্ধ অবস্থায় বৃদ্ধাশ্রমে ঘরের ভেতর অবস্থান করেন তাদের বেলায়ও একই কথা প্রযোজ্য। বাইরে বেরোতে যারা নিয়মিত সান-ব্লক ক্রিম ব্যবহার করেন, কালো চামড়া যাদের প্রকৃতি প্রদত্ত, যারা মুটিয়ে বা বুড়িয়ে গেছেন কিংবা সূর্যালোক পরিহার করে চলেন, তাদের এই ভিটামিনের ঘাটতির আশঙ্কা বেশি।

মনে রাখতে হবে, আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সবাইকেই রোদে আসতে হবে ভিটামিন-ডি পেতে। তবে সত্তরোর্ধ্ব বয়সী ভাঁজ পড়া ত্বক অনেক সময় লাগায় ভিটামিন-ডি তৈরি করতে। সে জন্য বয়স্ক মানুষকে ভিটামিন-ডির জন্য খানিকটা বেশিক্ষণ রাখতে হবে সূর্যস্নানে। আর তাদেরই বেশি দরকার এই ভিটামিন। তাই সবার উচিৎ সচেতন হই সচেতন থাকি। করোনাকালে নিয়মিত মাস্ক পরি, নিয়ম মেনে হাত ধুই।

এনসি/

সর্বশেষ