শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ , ৬ বৈশাখ ১৪৩১

modhura
Aporup Bangla

এরশাদকে নিয়ে মন্তব্যের জেরে সংসদে হট্টগোল

জাতীয়

অপরূপ বাংলা প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১১:৩৭, ৩১ জানুয়ারি ২০২৩

সর্বশেষ

এরশাদকে নিয়ে মন্তব্যের জেরে সংসদে হট্টগোল

ফাইল ছবি

জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে নিয়ে মন্তব্যের জের ধরে গতকাল সোমবার সংসদে হট্টগোল হয়েছে। দশম সংসদ নির্বাচনে এরশাদের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে লালমনিরহাট-১ আসনে সরকারি দলের সংসদ সদস্য (এমপি) সাবেক প্রতিমন্ত্রী মোতাহার হোসেনের এমন মন্তব্যের পর প্রতিবাদ জানান দলটির এমপিরা।

এ সময় সংসদে তুমুল হইচই ও চিৎকার-চেঁচামেচি হয়। একপর্যায়ে সেখানে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। এ সময় অধিবেশনে সভাপতির দায়িত্বে থাকা ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন। পরে সভাপতির চেয়ারে এসে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। তিনি উভয়পক্ষের বক্তব্য শুনে তথ্যগত কোনো ত্রুটি থাকলে তা পর্যবেক্ষণ করে এক্সপাঞ্জ করার রুলিং দেন। চলতি একাদশ ও দশম সংসদে এ ধরনের পরিস্থিতি দেখা যায়নি।

গতকাল সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনার জন্য ফ্লোর পান মোতাহার হোসেন। তিনি বক্তব্যের শুরুতে বলেন, ছয়বার সংসদে এবং দুবার উপজেলা চেয়ারম্যান পদে ভোট করতে প্রধানমন্ত্রী আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রথমবার ৫৫ হাজার ভোটে জিতেছি। গতবার জিতেছি ২ লাখ ৫৫ হাজার ভোটে। গত ভোটে (২০১৪) আমার স্ট্রং প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। উনি মাত্র ৭ হাজার ভোট পেয়ে উনার জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছিল হাতিবান্ধা-পাটগ্রামে। আরও একবার আমি সংসদ সদস্য হতে পারতাম।

আগের দিন আমি জিতেছি ২৭০০ ভোটে। পরদিন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আমাকে ২২০০ ভোটে হারিয়ে দিয়েছেন। তার ফলশ্রুতিতে গতবার আমার এলাকার ভোটার উনাকে জানিয়ে দিয়েছেন তার অবস্থাটা কী? মোতাহার হোসেনের বক্তব্যের শুরুতে জাতীয় পার্টির এমপিরা সংসদে ছিলেন না। তার বক্তব্যের আট মিনিটের মাথায় কাজী ফিরোজ রশীদ দাঁড়িয়ে মাইক ছাড়াই কথা বলতে শুরু করেন। এ সময় মোতাহার হোসেন থেমে যান।

কিছুক্ষণ পর সভাপতির দায়িত্বে থাকা ডেপুটি স্পিকার তাকে বসতে বলেন এবং পরে চাইলে পয়েন্ট অব অর্ডারে ফ্লোর দেবেন বলে জানান। তবে তাতে তিনি নিবৃত্ত না হয়ে মাইক ছাড়াই কথা অব্যাহত রাখেন। এ সময় সংসদে চিৎকার-চেঁচামেচি শোনা যায়। এ সময় মোতাহার হোসেন বলেন, ‘আপনি সিনিয়র সংসদ সদস্য... আমার সময়ে আরেকজন বক্তৃতা দেবেন কীভাবে?’ এ পর্যায়ে স্পিকার মোতাহার হোসেনের মাইকও বন্ধ করে দেন। মোতাহার হোসেনকে দাঁড় করিয়ে রেখে কাজী ফিরোজ রশীদকে এক মিনিটের জন্য ফ্লোর দেন। তিনি এক মিনিটের মতো কথা বলেন। তার মাইকও বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এ সময় ডেপুটি স্পিকার বলেন, আপনি পরে সময় নিয়ে যদি কোনো বক্তব্য থাকে বলবেন। ঠিক এ সময় বিরোধী দলের চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা দাঁড়িয়ে মাইক ছাড়াই কথা বলতে শুরু করেন। তখন ডেপুটি স্পিকার মোতাহার হোসেনকে একটু অপেক্ষা করতে বলেন। বলেন, আমি রাঙ্গা সাহেবকে একটু শুনি। রাঙ্গা ফ্লোর পেলে সরকারি দলের সদস্যরা চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করেন। তিনি ফ্লোর নিয়েই বলেন, চিৎকারের দরকার নেই, আমরা চলে যাব। পরে তিনি এরশাদের জামানত বাজেয়াপ্ত ইস্যুর ব্যাখ্যা দেন।... একপর্যায়ে তার মাইক বন্ধ হয়ে যায়। পরে ডেপুটি স্পিকার তাকে বসতে বলেন।

জাতীয় পার্টির এমপিদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনারা পয়েন্ট অব অর্ডারে কথা বলবেন। সময় দেওয়া হবে। আপনি বসুন। তার (মোতাহার হোসেন) বক্তব্য শেষ হোক। তবে ডেপুটি স্পিকারের কথায় কর্ণপাত না করে জাতীয় পার্টি এমপিরা চিৎকার করতে থাকেন। এ পর্যায়ে ডেপুটি স্পিকার বলেন, আপত্তিকর কিছু থাকলে তা এক্সপাঞ্জ করা হবে। আর পয়েন্ট অব অর্ডারে অন্য সুযোগে আপনি কথা বলবেন। আপনারা বসেন আমি পয়েন্ট অব অর্ডারে সুযোগ দেব। মোতাহার হোসেনকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনি এজেন্ডার ওপরে কথা বলবেন। এমন কথা বলবেন না যাতে সংসদ পরিচালনায় বিঘœ ঘটে।

তাকে বক্তব্য শেষ করার জন্য ফ্লোর দেন। ঠিক এ সময়ে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী তড়িগড়ি করে হাউজে প্রবেশ করে সভাপতির আসনে বসেন। এর আগে প্রায় ১০ মিনিটের মতো সংসদে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। স্পিকার হাউজে ঢুকে সবাইকে বসতে বলেন। বিরোধী দলের কাজী ফিরোজ রশীদ ও মসিউর রহমানের রাঙ্গার নাম উল্লেখ করে বসতে বলেন। তিনি বলেন, হাউজের একটি ডেকোরাম আছে। এখানে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনা হচ্ছে। এখানে একজন বক্তা তার বক্তব্য রাখছেন। সেই বক্তব্যে আপত্তিকর কিছু থাকলে সেটা আপনারা উত্থাপন করতে পারেন। কিন্তু এ জন্য আপনাদের অপেক্ষা করতে হবে। উনি (মোতাহার) উনার বক্তব্য শেষ করবেন। আপনারা হাত তুলবেন। যদি এমন কোনো বিষয় থাকে যেটা এক্সপাঞ্জ করার প্রয়োজনীয়তা আছে সেটা বিবেচনায় নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ারও সুযোগ আছে।

এ সময় মোতাহার হোসেনকে দেওয়া ১০ মিনিট শেষ হলে স্পিকার তাকে আরও এক-দুই মিনিট কথা বলার জন্য ফ্লোর দেন। ফ্লোর পেয়ে তিনি এরশাদের জামানত বাজেয়াপ্ত বিষয়ে আগের বক্তব্য ডিপেন্ড করে আবারও বলেন, উনারা (জাপা) যে প্রশ্নটি তুলেছেনÑ ১৯৮৫ সালে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে আমি দাঁড়িয়েছিলাম। সেবারও উনাদের ক্যান্ডিডেটের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছিল। ’৯০ সালে আমি আবারও উপজেলা চেয়ারম্যান পদে দাঁড়াই। তখনো উনাদের ক্যান্ডিডেটের জামানত আমি বাজেয়াপ্ত করি এবং শেষবার ভোটে... উনারা সবাই ছিলেন, রাঙ্গা ছিলেন। ওই বরিশালের রুহুল আমিন হাওলাদার ছিলেন এবং এরশাদ সাহেবের ভাইও ছিলেন। ঢাকা এয়ারপোর্টে আমাকে এরশাদ সাহেবই প্রশ্নটা তুলেছিলেন তুমি আমার জামানত বাজেয়াপ্ত করে দিলে।

আমি বলেছিলাম, আগেও দুবার করেছি। এবারও করলাম। আমি তো এখানে অসত্য, মিথ্যা কথা বলিনি। এটা কোনোভাবেই হতে পারে না। আর আমি বক্তব্য দিতেছি সেখানে উনারা মাঝখানে বক্তব্য দেবেন। এটা কোনোভাবে হতে পারে না। আমি খুব কষ্ট পাইলাম। এখানে অবশ্যই তাদের ডেকোরাম মানতে হবে। এ সময় স্পিকার তাকে অবশিষ্ট বক্তব্য শেষ করার অনুরোধ করেন। এ সময় জাতীয় পার্টির এমপিদের উদ্দেশ্য করে বলেন, উনারা আমার সময়টা নষ্ট করেছেন। আমার তিন মিনিট সময় নষ্ট করেছেন। জবাবে স্পিকার বলেন, আপনাকে এক মিনিটে শেষ করতে বলেছি। এক মিনিটে শেষ করবেন। এরপর মসিউর রহমান রাঙ্গাকে পয়েন্ট অব অর্ডারে ফ্লোর দেন স্পিকার।

তিনি বলেন, আমরা মাগরিবের নামাজের পর বাইরে ছিলাম। ওখান থেকে আমরা শুনলাম উনি বলছিলেনÑ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জামানত বাজেয়াপ্ত করে আমি এই সংসদে এসেছি। লালমনিরহাট-১ আসনে এরশাদের মনোনয়ন জমা দেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে রাঙ্গা বলেন, আমাকে এরশাদ সাহেব বললেন তুমি লালমনিরহাটে গিয়ে আমারটা (মনোনয়নপত্র) সাবমিট করে দিয়ে আসো। আমি সাবমিট করতে গিয়ে দেখলাম উনার (মোতাহার) লোকজন সব। আমাকে বাধা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তবুও আমি জমা দিই। এ সময় স্পিকার জানতে চান তিনি কোন সালের কথা বললেন। জবাবে তিনি বলেন, এটা ২০১৪ সালের ঘটনা।

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে পরাজিত করে উনি সংসদে এসেছেন এটা আমাদের জন্য খুবই দুঃখজনক। আপনি এটা এক্সপাঞ্জ করে দেবেন। পরে পয়েন্ট অব অর্ডারে ফিরোজ রশীদ বলেন, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। তিনি আমাদের মাঝে নেই। একজন মৃত্যু ব্যক্তির নামে এ ধরনের কুৎসা রটনা উচিত নয়। মোতাহার সাহেবের ভালো করে জানা উচিত এরশাদ সাহেব রংপুরের মাটিতে কোনোদিনও হারেননি। তিনি কারাগারে থেকে পাঁচটি আসনে জয়লাভ করেছেন। ২২টি আসনে একা প্রার্থী হলে সবগুলোতে জয়ী হতেন। তিনি কারাগারে থেকে দুবার পাঁচটি করে আসনে জয়ী হয়েছেন। মোতাহার হোসেনকে উদ্দেশ্য করে ফিরোজ রশীদ বলেন, উনি এত বড় বীরবিক্রম হয়ে গেলেন? এরশাদ সাহেবের জামানত বাজেয়াপ্ত হলো।

যে নির্বাচনে এরশাদ সাহেব দাঁড়াননি। তার কোনো প্রার্থীকে দাঁড়াতে দেননি। আমাকে দিয়ে প্রত্যাহার করালেন। পরে দামি দাঁড়িয়েছি। এটা সম্পূর্ণ এক্সপাঞ্জ চাই। আমাদের দাবি এটা এক্সপাঞ্জ করবেন। না হলে রংপুরের মাটিতে তার অসুবিধা হবে। পরে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এ ইস্যুতে রুলিং দেন। তিনি বলেন, মোতাহার হোসেনের বক্তব্যে যদি কোনো তথ্যগত ত্রুটি থেকে থাকে তাহলে সেটা বিবেচনা করে তা পরীক্ষা করে এক্সপাঞ্জ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এনসি/

সর্বশেষ

জনপ্রিয়