শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ , ৫ বৈশাখ ১৪৩১

modhura
Aporup Bangla

জানাজায় বিএনপি নেতার ডান্ডাবেড়ি খুলে দিলে ভালো হতো

দেশজুড়ে

অপরূপ বাংলা প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৬:৪৪, ২১ ডিসেম্বর ২০২২

সর্বশেষ

জানাজায় বিএনপি নেতার ডান্ডাবেড়ি খুলে দিলে ভালো হতো

ছবি- ইন্টারনেট

গতকাল মঙ্গলবার গাজীপুরের কালিয়াকৈরে হাতকড়া আর ডান্ডাবেড়ি নিয়েই মায়ের জানাজা পড়তে হয় বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের মামলায় গ্রেপ্তার থাকা বোয়ালী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. আলী আজমকে। মায়ের মৃত্যুতে প্যারোলে মুক্তি মিললেও জানাজা পড়ার সময় তার হাত ও পায়ের বাঁধন খুলে দেয়নি পুলিশ।

এ ঘটনায় স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। গতকাল ও আজ বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ নিয়ে সংবাদও প্রকাশিত হয়। বুধবার (২১ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ওই ঘটনায় তথ্যমন্ত্রীর বক্তব্য জানতে চান এক সাংবাদিক। জবাবে হাসান মাহমুদ বলেন, আমি মনে করি, জানাজার সময় তার হাতকড়া-ডাণ্ডাবেড়ি খুলে দিলে ভালো হতো। বার্ধক্যজনিত কারণে রোববার (১৮ ডিসেম্বর) বিকেলে আলী আজমের মা সাহেরা বেগম মৃত্যুবরণ করেন।

মায়ের মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে মঙ্গলবার (২১ ডিসেম্বর) সকালে গাজীপুর জেলা কারাগার থেকে প্যারোলে মুক্তি পেয়ে কালিয়াকৈরের পাবুরিয়াচালা এলাকায় জানাজায় উপস্থিত হন আলী আজম। স্বজনরা জানান, শেষবার মাকে দেখতে ও মায়ের জানাজা নিজে পরাতে আইনজীবীর মাধ্যমে সোমবার (১৯ ডিসেম্বর) বিকেলে গাজীপুর জেলা প্রশাসক বরাবর প্যারোলে মুক্তির আবেদন করেন আলী আজম।

কিন্তু ওই দিন দাপ্তরিক কাজ শেষ না হওয়ায় মঙ্গলবার তিন ঘণ্টার জন্য প্যারোলে মুক্তি মেলে তার। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্যারোলে মুক্তি পেয়ে সকাল ১০টায় নিজ বাড়ির পাশে মায়ের জানাজাস্থলে উপস্থিত হন বিএনপি নেতা আলী আজম। বেলা ১১টায় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। মায়ের দাফন শেষে আবার কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। পুরোটা সময় হাতকড়া ও ডাণ্ডাবেড়ি পরা অবস্থায় ছিলেন তিনি। এ ঘটনা তুলে ধরে একজন সাংবাদিক তথ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেন, জানাজার সময় হাতকড়া-ডান্ডাবেড়ি থাকার ঘটনায় স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

তাদের বক্তব্য, সরকার এতটা ‘অমানবিক’ না হলেও পারতো। জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমি বিষয়টি নিয়ে চেক করেছি। আমি গাজীপুরের পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি। ডান্ডাবেড়ি বা হাতকড়া পরানো না পরানো হচ্ছে জেল প্রশাসনের কাজ। সেটি আবার পুলিশের অধীনে নয় এবং একজন আইজিপি প্রিজন আছেন সেই প্রশাসনের অধীনে।

আমাদের পুলিশের যে মহাপরিদর্শক, তাদের অধীনে নয়। ডান্ডাবেড়ি কিংবা হাতকড়া জেল প্রশাসনই পরায়। আমি বিষয়টি চেক করেছি, তাকে প্যারোলে কয়েক ঘণ্টার জন্য মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে কয়েকজন জঙ্গি পালিয়ে গেছে। তাদের বিষয়ে যেভাবে সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার ছিল, সেটি করা হয়নি বিধায় তদন্তে উঠে এসেছে তারা পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে।

এজন্য তারা (গাজীপুরে) অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করেছেন। আমি এসপি পর্যায়েও কথা বলেছি, তারা বিষয়টি জানতেন না। যারা বিএনপি নেতাকে কেরি (বহন) করে এনেছিল, শুধু তারাই জানতেন; অন্যরা কেউ জানতেন না। তবে আমি মনে করি যে জানাজার সময় তার ডান্ডাবেড়ি এবং হাতকড়া খুলে দিলে ভালো হতো।

নির্বাচন সংশ্লিষ্ট এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, অবশ্যই নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব হচ্ছে সব দলকে নির্বাচনমুখী করা। এটা নির্বাচন কমিশনের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। আমরাও চাই সমস্ত রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। বিএনপিসহ সবাই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে একটি প্রতিযোগিতামূলক, সুষ্ঠু, স্বচ্ছ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হোক—সেটি আমরাও চাই। ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কি করবে না, সেটি একান্তই তাদের নিজস্ব ব্যাপার।

তবে একটি কথা আছে, গাধা জল ঘোলা করে খায়। বিএনপি যেমন ১০ তারিখ গাধা জল ঘোলা করে খাওয়ার মতো করে খেয়েছিল, নয়াপল্টন অফিসের সামনে থেকে নড়বে না বলে (সমাবেশ ইস্যুতে) পরে গরুর হাঁটের ময়দানে গিয়েছে। এক্ষেত্রেও আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, বিএনপি নির্বাচনে আসবে তাদের দল টিকিয়ে রাখার স্বার্থে। উল্লেখ্য, গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় গত ২৯ নভেম্বর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে হামলার অভিযোগে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে একটি মামলা করা হয়।

ওই মামলায় ২ ডিসেম্বর গ্রেপ্তার করা হয় আলী আজমকে। মামলায় আলী আজমসহ ১১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয় আরও ১৫০ জনকে। ওই মামলাটি ‘গায়েবি’ বলে অভিযোগ করে আসছে বিএনপি। জানাজার সময়ও আলী আজমের হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি খুলে না দেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার কালিয়াকৈর উপজেলা শাখার সভাপতি শাহজাহান মিয়া বুধবার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘মানবিক দৃষ্টিতে বিষয়টি খুবই দৃষ্টিকটু।

তিনি কোনো দাগি আসামি নন বলে শুনেছি। তাই তাকে হাতকড়া বা ডান্ডাবেড়ি না পরিয়ে জানাজায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ দিতে পারত পুলিশ।

এনসি/

সর্বশেষ

জনপ্রিয়