বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ , ৪ বৈশাখ ১৪৩১

modhura
Aporup Bangla

পর্যটনে নতুন ভাবনা

মতামত

সাইফ বরকতুল্লাহ

প্রকাশিত: ২৩:১৫, ১১ অক্টোবর ২০২২

আপডেট: ১৬:০০, ১৫ অক্টোবর ২০২২

সর্বশেষ

পর্যটনে নতুন ভাবনা

সাইফ বরকতুল্লাহ

লেখাটা শুরু করছি শ্রীলঙ্কার পর্যটনের একটি খবর দিয়ে। গত ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ শ্রীলঙ্কার গণমাধ্যম দ্য ডেইলি মিররের খবরে বলা হয়, অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে শ্রীলঙ্কা। দেশটির বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের তৃতীয় বৃহত্তম উৎস হলো পর্যটন খাত। এ বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত আট মাসে এই খাত থেকে ৮৯ কোটি ডলার আয় হয়েছে।  শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, আগস্টে এই খাত থেকে ৬ কোটি ৭৯ লাখ ডলার উপার্জন করেছে। জুলাইয়ের উপার্জন ছিল ৮ কোটি ৫১ লাখ ডলার। জুলাই মাসে ৪৭ হাজার ২৯৩ জন পর্যটক যান সেখানে।  শ্রীলঙ্কার প্রবাসী আয় ও পোশাক শিল্পের পরই পর্যটন খাত থেকে বেশি আয় হয়। এ খাতের ওপর নির্ভরশীল বহু শ্রীলঙ্কান পরিবার। কিন্তু প্রায় তিন বছর করোনার কারণে দেশটিতে পর্যটক কমে যাওয়ায় মারাত্মক অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে দ্বীপ রাষ্ট্রটি। এছাড়া, সরকারবিরোধী বিক্ষোভের কারণে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দেওয়ায় পর্যটকের সংখ্যা আরও কমে যায়। তবে বৈশ্বিক পর্যটন খাত পুনরুজ্জীবিত হওয়া এবং শ্রীলঙ্কার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও পর্যটন খাতের অংশীদারদের যৌথ উদ্যোগে দেশটিতে পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে।

দুই.
শুধু শ্রীলঙ্কা নয়, হাজার দুয়েক দ্বীপবেষ্টিত দেশ মালদ্বীপের কথাই ধরুন। দেশটিতে পর্যটনে এক নম্বর হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। পাঁচ লাখের সামান্য বেশি জনসংখ্যার এই দেশটিকে ২০২০ সালে ‘ওয়ার্ল্ড বেস্ট টুরিস্ট ডেসটিনেশন’ হিসেবে ঘোষণা করেছে ওয়ার্ল্ড ট্যুরিজম অর্গানাইজেশন। দেশটিতে থাকা বিচ্ছিন্ন এ দ্বীপগুলোতে পর্যটকদের আকর্ষণের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। পর্যটনের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে দেশটির সরকার। না দেওয়ারও কোনো কারণ নেই। এই খাত থেকে মালদ্বীপের আয়ের ৭০ শতাংশ আসে। মালদ্বীপের প্রায় দুই হাজার দ্বীপজুড়ে ছোটবড় বিভিন্ন আকারের হোটেল ও কটেজ রয়েছে। এর মধ্যে বিশ্বের অনেক নামিদামি ব্র্যান্ডের হোটেল-রেস্তোরাঁর শাখাও রয়েছে।

তিন.
বৈচিত্র্যপূর্ণ পর্যটনসম্পদ থাকা সত্ত্বেও বিদেশি পর্যটক আকর্ষণে পেছনের সারিতে বাংলাদেশ। করোনা মহামারির সংকট থেকে উত্তরণে এশিয়ার অনেক দেশ উদ্যোগ নিলেও বাংলাদেশে উল্টোচিত্র। কভিড-১৯-এ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পর্যটন শিল্প।  অথচ পর্যটন শিল্প বিকাশের অপার সুযোগ রয়েছে দেশে, যা অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। 

চার.
আমাদের নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক পরিবেশ রয়েছে। প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য এবং প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ পর্যটন খাতে উন্নয়ন ঘটাচ্ছে। নিজেদের ইতিহাস ঐতিহ্যকে তুলে ধরে পর্যটনের প্রচার চালাচ্ছে। এশিয়ার মধ্যে অনেক দেশ নিজেদের ইতিহাস ঐতিহ্যকে ট্যুরিজমের মাধ্যমে তুলে ধরেছে। নেপাল, ভুটানের অর্থনৈতিক কাঠামো ততটা সমৃদ্ধ না হলেও পর্যটন খাতে উন্নতি সাধন করে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে।  হেরিটেজ ট্যুরিজমের মাধ্যমে অনেক দেশ বিপুল রাজস্ব পাচ্ছে। বাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনাগুলোকে ঘিরে সেই সম্ভাবনা বিপুল। কাজে লাগাতে পারলে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আসবে। শিক্ষা-গবেষণা ও পর্যটন শিল্প বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। 

পাঁচ.
বাংলাদেশে আছে বন, পাহাড়, নদী, সাগর, দ্বীপ।  একদিকে যেমন পাহাড়-পর্বত, অন্যদিকে সবুজের সমারোহ। দক্ষিণে আছে বঙ্গোপসাগর। অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি বাংলাদেশে রয়েছে অসংখ্য প্রাচীন নিদর্শন ও বিখ্যাত দর্শনীয় স্থান। প্রতি বছর প্রচুর পর্যটক দেশ ও দেশের বাইরে থেকে আসেন এগুলো দেখার জন্য।  দেশে সব বয়সী মানুষের ভ্রমণের হার দিন দিন বাড়ছে। সেই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ সরকারও নানান উদ্যোগ নিচ্ছে। পর্যটনকে আরও এগিয়ে এই খাতে যুক্ত হচ্ছে নানান ব্যবস্থা।


করোনা মহামারির সংকট কাটিয়ে অর্থনীতিকে পুনর্জীবিত ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য যে পাঁচটি সেক্টরকে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে- এর মধ্যে পর্যটন উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-২০৩০ বাস্তবায়নে অন্যতম ভূমিকা রাখবে পর্যটন শিল্প। টেকসই উন্নয়ন বাস্তবায়নে অন্তর্ভুক্তিমূলক পর্যটন, সমবায় পর্যটন, গ্রামীণ পর্যটন, সুনীল পর্যটন, কমিউনিটি বেইজড ট্যুরিজম ও ভার্চুয়াল ট্যুরিজম উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।

ছয়.
‘পর্যটনে নতুন ভাবনা’ প্রতিপাদ্যে আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব পর্যটন দিবস। করোনাভাইরাসের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী পর্যটন খাতে ধস নেমেছে। লকডাউনের কারণে কমে যায় দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যটন বাণিজ্য। কোভিড-১৯ এর ধাক্কা সামলে নতুন করে পথ চলার প্রয়াসে এবারের বিশ্ব পর্যটন দিবসের গুরুত্ব অনেক। এবারের ‘বিশ্ব পর্যটন দিবস-২০২২’ উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বাংলাদেশ বিপুল পর্যটন সম্ভাবনাময় একটি দেশ। নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সমৃদ্ধ ইতিহাস, বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতি আমাদের দেশকে পরিণত করেছে একটি বহুমাত্রিক আকর্ষণসমৃদ্ধ অনন্য পর্যটন গন্তব্যে। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন, পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার, পার্বত্য চট্টগ্রামের অকৃত্রিম সৌন্দর্য, সিলেটের সবুজ অরণ্যসহ আরও অনেক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি, বাংলাদেশের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, ঐতিহাসিক এবং প্রত্মতাত্ত্বিক স্থানসমূহ এবং অতিথি পরায়ণ মানুষ শুধু দেশীয় নয়, বিদেশি পর্যটক ও দর্শনার্থীদের কাছেও সমান জনপ্রিয় এবং সমাদৃত। ’

পর্যটন শিল্প অনেক উন্নয়নশীল দেশের অর্থনীতি ও সামাজিক ব্যবস্থার মূল চালিকাশক্তি। আমাদের দেশেও এ শিল্পকে কাজে লাগাতে হবে। সম্মিলিতভাবে পর্যটনের উন্নয়ন ও বিকাশে কাজ করে বিশ্ব দরবারে দেশের পর্যটন শিল্পকে কার্যকরভাবে তুলে ধরতে হবে। 

লেখক: সাহিত্যিক ও সাংবাদিক

জা,ই

সর্বশেষ

জনপ্রিয়