শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ , ১৪ চৈত্র ১৪৩০

modhura
Aporup Bangla

রিজার্ভ থেকে এক বছরে বিক্রি ১৩ বিলিয়ন ডলার

অর্থনীতি

অপরূপ বাংলা প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১২:১০, ২৬ জানুয়ারি ২০২৩

সর্বশেষ

রিজার্ভ থেকে এক বছরে বিক্রি ১৩ বিলিয়ন ডলার

ছবি- ইন্টারনেট

বকেয়া আমদানি ব্যয় মেটাতে হচ্ছে। সাথে চলতি আমদানি দায়ও পরিশোধ করতে হচ্ছে। কিছু আমদানি ব্যয় না মিটিয়ে আবার ছয় মাসের জন্য বকেয়া রাখা হচ্ছে। এরপরেও গত এক বছরে সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলোর কাছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার রিজার্ভ থেকে বিক্রি করেছে ১০ বিলিয়ন ডলার।

এরই সুবাদে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গত এক বছরে কমেছে প্রায় ১৩ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা গেছে। এ দিকে ডলার সঙ্কট মেটাতে কিছু কিছু ব্যাংকের বিরুদ্ধে আবার বেশি দরে রেমিট্যান্স সংগ্রহের অভিযোগ উঠেছে। এর প্রভাব পড়ছে ডলার মূল্যের ওপর। ইতোমধ্যে আন্তঃব্যাংক ডলারের দাম ১০৭ টাকা থেকে ৫০ পয়সা বেড়ে ১০৭ টাকা ৫০ পয়সা হয়েছে।

সামনে এ ধারা অব্যাহত থাকলে ডলারের মূল্য আরো বেড়ে যাবে। আর তা হলে পণ্যের আমদানি ব্যয় আরো বেড়ে যাবে, যার সরাসরি প্রভাব পড়বে উদীয়মান মূল্যস্ফীতির ওপর। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, গত বছরের ১৮ জানুয়ারিতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৪৫.২১ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু এক বছরের ব্যবধানে চলতি মাসের একই সময়ে তা কমে নেমেছে ৩২.৪৮ বিলিয়ন ডলার।

এর মধ্যে চলতি মাসেই গতকাল পর্যন্ত সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করা হয়েছে ৯১ কোটি ডলার। মাস শেষে তা এক বিলিয়ন ছেড়ে যাবে। গত জুলাই থেকে গতকাল ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করেছে ১০ বিলিয়ন ডলারের ওপরে। আর এ কারণেই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে এসেছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো: মেজবাউল হক গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, বকেয়া এলসির দায় পরিশোধ করতে হচ্ছে। সাথে রয়েছে চলতি এলসির দায়। পাশাপাশি বড় বড় এলসি বিশেষ করে সার, বীজ, ভোগ্যপণ্যের আমদানি দায় পরিশোধ করতে হচ্ছে। এসব বকেয়া এলসির দায় কমে আসতে শুরু করেছে। অপর দিকে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ছে। গতকাল পর্যন্ত চলতি মাসে ১.৫৫ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। মাস শেষে তা দুই বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি হবে। পরের মাসে রমজান ও ঈদ হবে।

ওই দুই মাসেও রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়বে। ফলে সামনে রিজার্ভের ওপর চাপ আরো কমে যাবে বলে তিনি আশা করেন। এ দিকে ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, ব্যাংকগুলোর ডলার সঙ্কট এখনো কাটেনি, বরং দিন দিন তা বেড়ে যাচ্ছে। সরকারি ব্যাংকগুলো শুধু সরকারি কেনাকাটায় বিশেষ করে বিপিসির জ্বালানি তেল, বিসিআইসির সার, খাদ্য অধিদফতরের ভোগ্যপণ্য, বিদ্যুৎ বিভাগের বিদ্যুতের সরঞ্জামাদি আমদানির জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সরকারি ব্যাংকগুলোকে ডলার সরবরাহ করা হচ্ছে। চলতি জানুয়ারিতেই গতকাল পর্যন্ত ৯১ কোটি ডলার বিক্রি করতে হয়েছে রিজার্ভ থেকে।

কিন্তু বেসরকারি ব্যাংকগুলোর চাহিদা মেটাতে গেলে তা কয়েক বিলিয়ন ছেড়ে যেত। তবে বেসরকারি ব্যাংকগুলো তাদের গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য আমদানির জন্য এলসি খুলতে পারছে না। রফতানি আয় ও রেমিট্যান্স প্রবাহের মাধ্যমে যেটুকু সংগ্রহ করতে পারছে ওই টুক দিয়েই আমদানি ব্যয় মেটানো হচ্ছে। এতে ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক বাণিজ্যে ভাটা পড়ে গেছে। একটি ব্যাংকের তহবিল ব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, ব্যাংকগুলোর আয়ের একটি উল্লেখযোগ্য আয় আসে এলসি কমিশন থেকে। কিন্তু ডলার সঙ্কটের কারণে এলসি খুলতে না পারায় ব্যাংকগুলোর নিট মুনাফা কমে যাচ্ছে।

এর সামগ্রিক প্রভাব পড়েছে ব্যাংকগুলোর আয়ের ওপর। তিনি জানান, বৈদেশিক বাণিজ্যে আয় কমলেও ব্যয় দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। কারণ রেমিট্যান্স সংগ্রহে কোনো কোনো ব্যাংক আগ্রাসী ব্যাংকিং করছে। তারা বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন করে এমন ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাফেদা ও ব্যাংকারদের সংগঠন এবিবি বেঁধে দেয়া ১০৭ টাকা দর কিছু কিছু ব্যাংক মানছে না।

তারা বেশি পরিমাণ রেমিট্যান্স সংগ্রহের জন্য প্রতি ডলার ১১৩ টাকা পর্যন্ত দরে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করছে। ইতোমধ্যে বাফেদা ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সতর্ক করা হয়েছে। প্রয়োজনে তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপ কামনা করবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

এনসি/

সর্বশেষ