শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ , ১৪ চৈত্র ১৪৩০

modhura
Aporup Bangla

বীমাখাতে কৌশলের দুর্ভিক্ষ চলছে

মতামত

মোশারফ হোসেন

প্রকাশিত: ২২:০৮, ৬ মার্চ ২০২৩

সর্বশেষ

বীমাখাতে কৌশলের দুর্ভিক্ষ চলছে

মোশারফ হোসেন

মানুষের প্রয়োজনে দেশের প্রয়োজনে এক ঐতিহাসি মূহুর্তে বীমার উৎপত্তি হয়েছে। এ জন্য ওই সমস্ত দেশে বিশেষ করে ইংল্যান্ডে এখনো জনপ্রিয় রয়েছে। এশিয়া কিন্তু বাংলাদেশে এতো অজনপ্রিয়  প্রোডাক্ট আর কোনোটাই বোধ হয় নেই। বীমার কথা শুনলেই মানুষ পালায়। তারা মনে করে বীমা একটা অজনপ্রিয় প্রোডাক্ট। অথচ এটা খুবই জরুরী। অথচ বীমা কিন্তু অজনপ্রিয় না। যারা এর সঙ্গে জড়িত তাদের কারণেই এটা অজনপ্রিয় হয়ে গেছে। কারণ মানুষের যে প্রত্যাশা এটা পুরণে বীমাখাত বারবার ব্যর্থ হচ্ছে। এর সাথে জড়িতদের মানসিকতাই দায়ী। আমি একটা প্রোডাক্ট নিয়ে গেলে সেটা মানুষের বা ক্লায়েন্টের সন্তুষ্টির জন্যই তো নিয়ে যাবো। আমরা যারা এর পেছনে কাজ করি তাদের মন-মানসিকতার কারণেই প্রোডাক্ট অজনপ্রিয় হয়ে গেছে। এটা আমাদেরকেই আবার জনপ্রিয় করতে হবে। এটা না করতে পারলে বীমা ভবিষ্যৎ খুব খারাপ। 
একটা জিনিস হচ্ছে, যে অনিয়মগুলো আছে, সেগুলো স্¦ীকার করে, সবাই আহাজারি চিৎকার করছে বীমা খাত বাঁচান, কিন্তু  আমাদের নিজের চেহারাটা আয়নায় দেখানোর সৎ সাহস নাই। যে দুরবস্থা, শৃংখলার অভাব সেটা আমরা কাগজে কলমে দেখাচ্ছি না, মুখে বলছি। সেটা দেখানোর সৎ সাহসটা থাকবে হবে। আরেকটা ব্যাপার আমাদের কালচারটা কি?  আদালতে গিয়ে আমরা ধর্মগ্রন্থ ছুঁয়ে বলি যাহা বলিবো সত্য বলিব, সত্য বৈ মিথ্যা বলিব না। এটা বলার পর যা যা মিথ্যা সব বলি। এই কালচারের মানুুষ আমরা। 
এখানে কিছু কিছু ক্লায়েন্টের অসততাও আছে। কিন্তু আমি বলবো সমস্ত দায় দায়িত্ব যে প্রোডাক্ট সেল করে তার উপরে। প্রোডাক্ট জনপ্রিয় করার দায়িত্ব মালিক ও সংশ্লিস্টদের । এদের সততা আন্তরিকতা আসতে হবে। সততা-আন্তরিকতা নাই। আমাদের যে ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশন আছে তার সভাপতি শেখ কবির হোসেন ওনাকে আমারা সঠিক ভাবে ব্যবহার করতে পারছিঁ না। খুবই ভালো মানুষ। একটা মানুষের ধার এবং ভার দুটোই লাগে। ওনার ধারও আছে। ভারও আছে। কিন্তু আমরা বীমা সংশ্লিষ্ট লোকজন তাকে ব্যবহার করতে পারছি না। কিন্তু বাংলাদেশের বীমা সেক্টরে যে দুরবস্থা, এটা দুর করার জন্যই কিন্তু আমরা শেখ কবির হোসেন কে নিয়ে আসছি। এটা সঠিক সিদ্ধান্ত । কিন্তু ওনাকে আমরা ব্যবহার করতে পারছি না। আমার কাছে মনে হচ্ছে, বেদের মেয়ে জোৎ¯œা একটা সিনেমা হয়েছিল ৮৫ সালে, আজকের কাগজ তখন বিচিত্রা ফরমেটে বের হতো। সেখানে সাবেক ছাত্র নেতা সাংবাদিক মারুফ চিনু,  সাংবাদিকতা করতো কবিও পরে বোরহান উদ্দিন কলেজের প্রিন্সিপাল হয়ে মারা গেছেন। উনি একটা হেড লাইন দিয়েছিল ‘শুন্য নেতৃত্বের দেশে রুচির দুর্ভিক্ষ।’ তিনি বোঝাতে চেয়েছেন বেদের মেয়ে জোৎ¯œা মানুষ  এতো ভাবে দেখেন আবাল বৃদ্ধ বনিতা কিন্তু অনেক ক্লাসিকাল ছবি  আছে সেগুলোতে মানুষ যায় না। তখন উনি দু:খ করে এই কথাটা লিখেছিলেন। 
আমাদের এখানে আমরা সঠিক ব্যক্তি খুঁজে পেয়েছি এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছি এই লোকটাকে দিয়েই হবে। এখানে নেতৃত্ব ভালো আছে। কিন্তু কৌশলের দুর্ভিক্ষ চলছে। আমরা কৌশলটা ওনাকে পরামর্শ দিতে পারছি না, এভাবে আগান। 
আরেকটা উদাহরণ আমি দিতে পারি। আমরা যখন ছাত্র ছিলাম তখন সিলেবাসে একটা ওয়াডর্স ওয়ার্থের  একটা কবিতা ছিল। ১৮৮২ সালে লন্ডনে মানুষের মধ্যে নীতি নৈতিকতা খুবই খারাপ অবস্থায় ছিল। মানুষ খুবই স্বার্থপর হয়ে পড়েছিল। শুধু টাকা পয়সার পুজা করতো। নিজেদের স্বার্থ ছাড়া কিছু দেখতো না। তখন কবি ওয়ার্ডস ওয়ার্থ কবি মিল্টনের কথা বলতেন। মিল্টন ছিল ১৭শ শতকের কবি সে বিশুদ্ধতাবাদী কবি ছিলেন। তিনি মনে করতেন ইশ^রের পুজা করা দরকার এবং গড যে ধর্ম দিয়েছেন খৃষ্ট ধর্মটা যদি সঠিক ভাবে বাস্তবাযন করি তাহলে মানুষ বিশুদ্ধ হবে, সমাজ বিশুদ্ধ হবে। তখন কবি ওয়াডর্স ওয়ার্থ লিখেন, ‘ও মিল্টন তোমাকে দরকার এই সময়। তুমি না হলে তোমার আত্মাকে দরকার। তোমার বাণী দরকার। এটা যদি আমার বস্তবায়ন করি তাহলে আমাদের এই লন্ডন বেঁচে যাবে। তুমি কোথা?’  তিনি এটা ফিল করছেন। 
সেই রকম আজ আমরা শেখ কবিরকে ব্যবহার করতে পারছি না কিন্তু একদিন আমাদের আফসোস করতে হবে। পরবর্তীতে আমরা বলবো হে কবির স্যার আপনি কোথায়? আপনি আসেন আমাদের বাঁচান। 

আরেকটা জিনিস হলো যে আমাদের আইডিআরের চেয়ারম্যান খুবই ভালো মানুষ। খুবই সজ্জন এবং ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র। সাহিত্যের মানুষ একটু নরম কিন্তু নীতিতে শক্ত অটল থাকেন। তিনি মহসিন হলের ছাত্র। আমি ওনাকে প্রথম বর্ষ থেকে চিনি। খুবই ভালো মানুষ। তাকেও আমরা ব্যবহার করতে পারছি না। 
এই যে অন্ধকার। এই অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসার জন্য আমার কবি নজরুলের কবিতার কথা মনে পড়ছে। ‘উষার দুয়ারে হানি আঘাত/ আমরা আšিব রাঙ্গ প্রভাত।’ 
আমার মনে হয় এটার দুজন সঠিক মানুষ। আমরাই এই অন্ধকার ভেদ করে এই দুজনকে সাথে নিয়ে রাঙ্গাপ্রভাত আমরাই আনতে পারবো। যতি সঠিক ভাবে ব্যবহার করতে পারি। 
এই অন্ধকার পরিবেশের বাইরে নয় গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স। যে অন্ধকার চলছে সেটার ছাপ তো এখানে আছেই। গোটা খাত যেভাবে চলছে আমরাও সেভাবে চলছি। আমাদের চেষ্টা আছে ভালো করার। আমরা একটা সমাজের মধ্যে আছি। ৭৭টা কোম্পানী। সাধারণ বীমা ৪৬টা।  সবাই যেভাবে চলে আমি একা  কোনো কিছু করতে পারবো না। হাজারো শয়তার তার মধ্যে একটা ব্যক্তি যদি ফেরেস্তা থাকে ওই ফেরেস্তা কিন্তু চলতে পারবে না। ওই ফেরেস্তার বাধ্য হয়ে মানতে হবে। না হলে সবাই তাকে পাগল বলবে। উত্তরণের  উপায় তো বলেছি। সেটা হলো কৌশলের দুর্ভিক্ষ চলছে। আমার এই দুজন মানুষকে কাজে লাগাতে পারছি ন। আর নিজেদের মেলে ধরছি না। 
 

জা. ই

সর্বশেষ