বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ , ১৩ চৈত্র ১৪৩০

modhura
Aporup Bangla

তাল সামলাতে পারবে বিএনপি?

মতামত

টুটুল রহমান

প্রকাশিত: ১০:৫৬, ৩০ নভেম্বর ২০২২

সর্বশেষ

তাল সামলাতে পারবে বিএনপি?

অলংকরণ : জীবন শাহ

শুরুটা করেছিলেন আমানউল্লাহ আমান। রাজনীতিতে যিনি বিএনপির কামান হিসেবে অভিধা পেয়েছেন। ছিলেন তুখোড় ছাত্রনেতা। মনোগ্রাহী-হৃদয়গ্রাহী বক্তব্য রাখতে তার জুড়ি নেই। একেবারেই অগ্নিঝরা। তিনি একটা জনসভায় বলে বসলেন, আগামী ১০ ডিসেম্বর থেকে দেশ চলবে খালেদা জিয়ার কথায়। 
কি সাংঘাতিক কথা? নির্বাচন হলো না- দেশে একটি পক্ষ নিতে চাইছে ভিন্ন পরিস্থিতির সুযোগ, অন্যদিকে এতিমের অর্থ আত্মসাৎ মামলায় খালেদা জিয়া মূলত জেলে বন্দি। অথচ খালেদা জিয়ার কামান বললেন, ১০ ডিসেম্বর দেশ চলবে খালেদা জিয়ার কথায়! সেই ১০ ডিসেম্বরের আলোচনা আজো চলছে। মানুষ ভাবছে, কি জানি কি হয়। 

ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা। সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য।  তিনি কোনো কথা বলার আগেই উচ্চারণ করেন, ভোটারবিহীন অবৈধ সরকার। রাতের সরকার। ইত্যাদি ইত্যাদি। তার ভাষায় সরকার যদি অবৈধই- তাহলে তার সংসদ সদস্য পদ বৈধ হয় কী করে? তিনি লাখ লাখ টাকা ভাতা নিচ্ছেন কী করে। নামের আগে-পরে সংসদ সদস্য লিখছেন কী করে। যদি ভুল না করি তাহলে তার বাবা অলি আহাদ ভাষা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। ছিলেন আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতা। বামপন্থি হিসেবে তার সুনাম আছে।  জেনারেল জিয়াউর রহমানের আমলে একটি দল খুলেছিলেন। মোটামুটি সজ্জন ব্যক্তি ছিলেন এ কথা মোটামুটি সবাই জানেন। তার পরিমিতি বোধ ছিল। কিন্তু তার মেয়ে রুমিন ফারহানাকে দেখলাম কুমিল্লার জনসভায় যে ভাষায় প্রধানমন্ত্রীকে হেয় করে বক্তব্য দিচ্ছেন তাতে তাকে শিক্ষিত লোক বলে চেনাই যাচ্ছে না। খুব সম্ভবত সামনে বসা  আমজনতার স্রোত তাকে সেই কাতারে নামিয়ে দিয়েছে। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে বলছেন, ‘২০১৪, ২০১৮ সালে বহুত নকশা করছো। আর নকশা করতে পারবা না। হাসিনা তোমাকে পদত্যাগ করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রীকে তুমি সম্মোধন দোষের কিছু না। কিন্তু সেটার উপস্থাপনটা জরুরি। তার 'বডি ল্যাংগুয়েজ'টা দেখা জরুরি। শামীম ওসমান রাজনীতিতে ‘খেলা হবে’ সংলাপটার জনক। এখন দেখি রুমিন ফারহানাও আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে খেলতে চান। এ নিয়ে তো নানা লজ্জাষ্কর ট্রল হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। কথা হচ্ছে- রুমিন ফারহানারা বড় একটা দলের প্রতিনিধি তারা যেভাবে উদ্ধত্য প্রকাশ করছেন, যেভাবে প্রধানমন্ত্রীকে হেয় করে কথা বলেন, তাতে মনে হচ্ছে ক্ষমতায় গেলে বিএনপি তাল সামলাতে পারবে তো? 
শুধু বিএনপির প্রথম সারির নেতাদের হুমকি-ধামকি নয়। কিছুদিন আগে যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া সাকাপুত্রের কথা নিশ্চয় আপনাদের মনে আছে। তিনি বিএনপির জাতীয় নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে জোরালো ভাষায় বলেই ফেললেন, আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়ি যেতে দেবেন না। যুদ্ধাপরাধের দায়ে যাদের ফাঁসি হয়েছে সেই শহীদদের বাড়ি বাড়ি দিয়ে ক্ষমা চেয়ে বাড়ি ফিরতে হবে! বিএনপি কিন্তু এই বক্তব্য নিজেদের বলে দাবি করেনি। আবার প্রতিবাদও করেনি। মৌন্যতা সম্মতির লক্ষণ বলে ধরে নিচ্ছি। 
যারা পুরনো রাজনীতিবিদ তারা অনেক সময় পাবলিককে খাওয়ানোর জন্য বিভিন্ন চটকদার, শাসকের রক্ত চক্ষু উপেক্ষা করে বক্তব্য দিয়েছেন। সেগুলো অবশ্য শালীনতার মধ্যেই ছিল। প্রতিপক্ষকে রাজনৈতিকভাবে ঘায়েল করার করার জন্য এবং জনতাকে আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করার জন্য তারা বলতেন। কিন্তু সেগুলো উদ্ভট ছিল না। এখন ১০ ডিসেম্বর কি হবে না হবে জানি না তবে খালেদা জিয়ার কথায় দেশ চলবে না- এটা ঠিক। ১০ তারিখ থেকে দেশ চালাতে হলে নিশ্চয় তার আগের দিন তাকে কোলে করে ক্ষমতায় কেউ বসাবেন না। একটা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তাকে ক্ষমতায় গিয়ে দেশ পরিচালনা করতে হবে। আমি ভাবছি ১০ ডিসেম্বরের পর আমানউল্লাহ আমান মুখ দেখাবেন কী করে?
রুমিন ফারহানাকেও মনে রাখতে হবে তারা এদেশের মানুষের প্রতিনিধি। তারা যে আচরণ করবেন সেটা অনুকরণীয় হবে। এই যদি হয় তার মতো শিক্ষিত লোকের রাজনৈতিক ভাষা তাহলে আমাদের বলার কিছু থাকে না। দেশের রাজনৈতিক শিষ্ঠাচারের ভবিষ্যত আরো অন্ধকারে তলিয়ে যায়।
লেখাটা শেষ করি এভাবে- ২০০১ সালের অক্টোবরের নির্বাচনের পর আমার পাশের গ্রামে বিএনপির তাণ্ডব নিজের চোখে দেখেছি। ধরেই নিচ্ছি সুষ্ঠু নির্বাাচন হবে। বিএনপি ক্ষমতায় যাবে। এখনই তাদের যে নাচন-কোদন, উদ্ধত্য প্রকাশ পাচ্ছে তাতে তাল সামলাতে পারবে তো? নাকি আরো এক সংঘাতময় বাংলাদেশ আমরা পেতে যাচ্ছি। আর দেশ যদি এই দিকে ধাবিত হয় তাহলে দেশের মানুষ কি সেই পরিবর্তন চায়?
 

এনসি/

সর্বশেষ