শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ , ৬ বৈশাখ ১৪৩১

modhura
Aporup Bangla

উঠে যাচ্ছে জ্বালানি তেলের ভর্তুকি, ৩ মাস পর পর দাম সমন্বয়

অর্থনীতি

অপরূপ বাংলা প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৭:০২, ১৯ ডিসেম্বর ২০২২

আপডেট: ১৭:৩৯, ১৯ ডিসেম্বর ২০২২

সর্বশেষ

উঠে যাচ্ছে জ্বালানি তেলের ভর্তুকি, ৩ মাস পর পর দাম সমন্বয়

ছবি- ইন্টারনেট

ডিজেল, পেট্রোল ও অকেটেনের ভর্তুকি প্রত্যাহার করে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে যুক্ত করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। প্রাথমিকভাবে ৩ মাস পর পর দর সমন্বয় করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সূত্র এমন তথ্য নিশ্চিত করেছে। গত ১৩ ডিসেম্বর জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠকে এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছেন বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক কর্মকর্তা।

তবে তারা কেউই নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি। দর চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে এলপি গ্যাসের দর পদ্ধতিকে মডেল বিবেচনা করা হচ্ছে। এলপিজির দর প্রতিমাসে নির্ধারণ করা হলেও জ্বালানি তেলের দাম ৩ মাস পর পর দর চূড়ান্ত করার কথা ভাবা হচ্ছে। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) প্রতিমাসে এলপিজির দর নির্ধারণ করে আসছে। গণশুনানির মাধ্যমে আমদানিকারকদের খরচ ও কমিশন চূড়ান্ত করা হয়েছে।

এখন প্রতিমাসে শুধু গ্যাসের দর অংশ ওঠানামা করে। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে গেলে পণ্যমূল্য বেড়ে যায়, কমে গেলে সেই অংশটুকু কমে যায়। ডিজেল পেট্রোলের ক্ষেত্রেও এমন পদ্ধতি অনুসরণের কথা ভাবা হচ্ছে। পরিচালন খরচ ও আমদানি ব্যয় আলাদা করা হবে। পরিচালন খরচ অপরিবর্তিত থাকবে আর, ৩ মাস পর আন্তর্জাতিক বাজারের দরের সঙ্গে কমবেশি হবে দেশের জ্বালানি তেলের বাজারদর। বিইআরসি যাতে আইনী কাঠামোর মধ্যে থেকে কাজটি করতে পারে, সে জন্য ঝুলে থাকা বিইআরসি প্রবিধানমালার সংশোধনীসহ চূড়ান্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বিইআরসি আইনের আলোকে ২০১২ সালে প্রবিধানমালার খসড়া করে মন্ত্রণালয়ে জমা দিলেও ঝুলে রয়েছে। ঝুলে থাকা প্রবিধানমালায় প্রয়োজনে পরিমার্জন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। শিগগিরই এ বিষয়ে দৃশ্যমান হবে বলে জানা গেছে। তবে যে পদ্ধতিতেই হোক সরকার জ্বালানি তেলে ভর্তুকি থেকে বের হয়ে আসতে চায়। কয়েক মাস ধরেই বলা বলি চলছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যেও এই পরিকল্পনার এ তথ্য পরিষ্কার হয়েছে।

রোববার (১৮ ডিসেম্বর) এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এতদিন আমাদের অর্থ ছিল আমার ভর্তুকি দিয়েছি। কিন্তু করোনা মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বিশ্বব্যাপী যে মন্দা দেখা দিয়েছে তাতে আমরাও আক্রান্ত। সুতরাং এতদিন বিদ্যুৎ এবং গ্যাসে যে ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে। সেই ভর্তুক্তির টাকা এখন আপনাদের দিতে হবে।

অন্যদিকে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, আমরা জ্বালানি তেলের বাজার উন্মুক্ত করার কথা চিন্তা করছি। এখানে সরকারি কোম্পানির পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও থাকতে পারে। একটি মেকানিজম করার চেষ্টা করা হচ্ছে, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে দেশেও বাড়বে, আর কমে গেলে দেশেও কমে যাবে। সরকার জ্বালানি তেলে আর ভর্তুকি দিতে চায় না।

যদিও সরকারের ভর্তুকির হিসেব নিয়ে অনেকের দ্বিমত রয়েছে। তারা মনে করে উচ্চহারে ট্যাক্স আদায় করা হচ্ছে, অন্যদিকে বলা হচ্ছে ভর্তুকির কথা। এটা এক ধরনের ছলচালুতির মতোই। ট্যাক্স দিয়েও মুনাফা করছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। কিছু পণ্যের উপর ৩৪ শতাংশ পর্যন্ত ট্যাক্স-ভ্যাট আদায় করা হচ্ছে। অর্থাৎ ১০০ টাকার মধ্যে ৩৪ টাকাই ডিউটি নেওয়া হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বেড়ে গেলে ট্যাক্সও বেড়ে যাচ্ছে।

দামের পরিবর্তে পণ্যের পরিমাপের উপর ট্যাক্স-ভ্যাট নির্ধারণ করার দাবি জানিয়ে আসছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। তাদের প্রস্তাব হচ্ছে তেলের পরিমাপের একটি কাঠামো থাকবে, আন্তর্জাতিক বাজারে বেড়ে গেলেও ভ্যাট-ট্যাক্স অপরিবর্তিত থাকবে। বর্তমানে নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে জ্বালানি তেলের দর নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। একক পাইকারি বিক্রেতা হচ্ছে বিপিসি। তারা নিজেরা আমদানি করছে পাশাপাশি দেশীয় গ্যাস ফিল্ডগুলোর উপজাত (কনডেনসেট) থেকে পাওয়া পেট্রোল, অকটেন রাষ্ট্রীয় কোম্পানি পদ্মা, মেঘনা ও যমুনার মাধ্যমে বাজারজাত করে আসছে।

পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা নিজেদের ডিলারের মাধ্যমে সারাদেশে বিতরণ করে থাকে। পেট্রোল কিছুটা আমদানি করা হলে অকটেন দেশীয় গ্যাস ফিল্ড থেকে পাওয়া যাচ্ছে। মূলত বিপুল পরিমাণ ডিজেল আমদানি করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। সরাসরি ডিজেলের পাশাপাশি ১৫ লাখ টন অপরিশোধিত তেল (ক্রড) আমদানি করে চাহিদা পূরণ করা হচ্ছে।

সরকার বছরে আরও ৩০ লাখ টন পরিশোধনের লক্ষে ইআরএল ইউনিট-২ নির্মাণে প্রকল্প নিয়েছে। বিপিসির তথ্য অনুযায়ী ২০২০-২১ অর্থ বছরে দেশে জ্বালানি তেলের চাহিদা ছিল ৬২ লাখ ৯৯ হাজার ৭৩০ মে. টন। খাত ভিত্তিক সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়েছে পরিবহন খাতে, ওই অর্থ বছরে ৬২.৯২ শতাংশ সমান ৩৯ লাখ ৬৩ হাজার ৭২৫ মে.টন ব্যবহৃত হয়েছে।

এরপরেই রয়েছে কৃষি খাতে ৯ লাখ ৭৫ হাজার ৬০৪ মে. টন, বিদ্যুৎ খাতে চাহিদা ছিল ৬ লাখ ৫২ হাজার ৬৬ মে. টন। শিল্পে ৪ লাখ ৫০ হাজার ৪৩৭ মে.টন. গৃহস্থালীতে ৯৭ হাজার ৬০০ টন এবং অন্যান্য খাতে ১ লাখ ৬০ হাজার ২৯৮ মে.টন।

তবে জ্বালানি তেলের এই চাহিদার সূচক এখন নিম্নগামী হবে বলে মনে করেন কেউ কেউ। শতভাগ বিদ্যুতায়নের কারণে সেচের চাহিদা কমে আসবে, অন্যদিকে পরিবহনেও আসছে বৈদ্যুতিক যানবাহন, সেখানেও চাহিদা কমে যাবে।

এনসি/

সর্বশেষ

জনপ্রিয়