শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ , ১৪ চৈত্র ১৪৩০

modhura
Aporup Bangla

কোম্পানীগঞ্জে মাটি বিক্রির কারনে প্রশ্নবিদ্ধ পুলিশ ও প্রশাসন

দেশজুড়ে

অপরূপ বাংলা প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৮:০০, ৮ জানুয়ারি ২০২৩

আপডেট: ১৮:০১, ৮ জানুয়ারি ২০২৩

সর্বশেষ

কোম্পানীগঞ্জে মাটি বিক্রির কারনে প্রশ্নবিদ্ধ পুলিশ ও প্রশাসন

ছবি- ইন্টারনেট

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরপার্বতী, রামপুর, মুছাপুর, চরফকিরা ও চরহাজারী ইউনিয়নে ফসলী জমির টপসয়েল লুটে নিচ্ছে মাটি খেকো সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেট এতই শক্তিশালী যে এখানকার প্রশাসন তাদের কাছে অসহায়ত্ব প্রকাশ ছাড়া আর কিছুই করার থাকেনা। ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা মাটি খেকো সিন্ডিকেটের কাছ থেকে মাটির গাড়ী প্রতি টাকা নিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

রাজনৈতিক প্রভাবে উপজেলা প্রশাসন সরকারী কঠোর নির্দেশনা পালনে উদ্যোগী হলেও স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের একটি অংশের আশ্রয়- প্রশ্রয়ে মাটি খেকো ও বালু খেকো সিন্ডিকেটের এ অবৈধ ব্যবসায় রমরমা ভাবে চলছে। এতে আশঙ্কাজনক হারে কৃষি জমির পরিমাণ কমছে, জমি হারাচ্ছে উৎপাদন ক্ষমতা, ফসলী জমিগুলোতে থাকা নানা রবি মৌসুমের ফসলের জমির বুকের উপর দিয়ে প্রতিদিন পালে পালে ড্রাম ট্রাক চলার কারনে একদিকে ফসল নষ্ট হচ্ছে, অপরদিকে কমছে ডাল ও অন্যান্য জাতীয় ফসলের উৎপাদন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার চরপার্বতী ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড় মৌলভীবাজার বেডিবাঁধ সংলগ্ন কৃষি জমি, ৯নং ওয়ার্ড় আদর্শ পাড়া এলাকার কৃষি জমি, চরহাজারী ইউনিয়নের খোকার দোকানের উত্তর পাশে ফসলী জমি, ৭নং ওয়ার্ড বেঁড়ির পূর্ব-পশ্চিম পাশের কৃষি জমি, এনামের টেকের দক্ষিণ পূর্ব এলাকার কৃষি জমিসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষি জমির টপসয়েল (জমির উর্বরাংশ) মাটি খেকো সিন্ডিকেট লোপাট করছে। প্রতিদিন ১৫-২০ টি ড্রাম ট্রাক, ট্রাক্টর, হ্যান্ড ট্রলি যোগে এসব মাটি যাচ্ছে বিভিন্ন ইট ভাটায়।

চরপার্বতী ও চরহাজারী ইউনিয়নে মাটি খেকো সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রক ঝর্ণা মিজান (৭,৮,৯ নং ওয়ার্ড সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার ঝর্ণার স্বামী), ফাহাদ বাহিনী প্রধান ফাহাদ, আইয়ুব আলী বিল্লা, ছোটন মেম্বারের ভাই বেলাল, হকসাব মেম্বারের ভাগনে দেলোয়ার, মিজান, মাটি কাদেরসহ আরও কয়েকজন। চরপার্বতী ইউনিয়নের মৌলভীবাজার সমাজের সভাপতি মাহবুবুল হক, ৯নং ওয়ার্ড গ্রাম পুলিশ হানিফ চকিদার প্রতি ড্রাম ট্রাক মাটি ২হাজার টাকা দরে মাটি খেকো সিন্ডিকেটের কাছে বিক্রি করেন বলে স্থানীয়রা জানায়।

ওই ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য নুর উল্যা তার এলাকায় মাটি বহনকারী ট্রাক আটকিয়ে টাকা আদায় করে ছেড়ে দেয়া, মাটি ক্রেতা-বিক্রেতা এবং পুলিশের সাথে সমন্বয় করেন বলে বিভিন্ন ব্যক্তিরা অভিযোগে নিশ্চিত করেন। এসব কৃষি জমি থেকে কাঁচা টাকার লোভ দেখিয়ে জমির মালিকদেরকে এক দেড় ফুট মাটি নেয়ার কথা বলে একসাথে ২-৩টি স্কেবেটর মেশিন দিয়ে স্বল্প সময়ে ৪-৫ ফুট গভীর করে মাটি নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। জমির মালিকরা ঠিকমত টাকাও পায় না, অধিক গভীরতার কারনের ঠিকমত ফসলও উৎপাদন করতে পারেনা। মাটি ভর্তি ড্রাম ট্রাকগুলো ফসল থাকা জমির বুকের ওপর দিয়ে যাওয়ার ফলে ওই সকল জমির ফসল মাড়িয়ে নষ্ট করে ফেলা হয়।

এলাকাভিত্তিক রাজনৈতিক প্রভাবশালী ও কিশোরগ্যাং সদস্যদের কারনে করাই যায় না, কিছু জিজ্ঞেস করলেও হেনস্তা হতে হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। মাটি খেকো সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে খাদ্য উদ্বৃত্ত খ্যাত কোম্পানীগঞ্জে ফসলী কৃষি জমির পরিমাণ কমছে, গভীরতার কারনে উৎপাদন ক্ষমতা হারাচ্ছে এবং জমিতে চাষ করা নানা ফসল নষ্ট হয়ে উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে আশঙ্কাজনক ভাবে। মাঝেমধ্যে মাটিবহন করা ড্রাম ট্রাক প্রশাসন আটকও জরিমানা করলেও ,পুলিশ প্রশাসনের ইউনিয়ন ভিত্তিক দায়িত্বে থাকা বিট অফিসাররাও নেপথ্যের বড় কর্তা এসব অপকর্ম সমন্বয় করে চুটিয়ে অবৈধ টাকা উপার্জনের অভিযোগ করেছেন জনপ্রতিনিধিগণ।

মাটি খেকো সিন্ডিকেটের অন্যতম বেলাল জানান, কৃষি জমির মালিকদের থেকে আমি মাটি হাজার হিসেবে ক্রয় করে এসব মাটি বিভিন্ন ক্রেতার কাছে পুকুর, খাল, নদীর মাটি প্রতি হাজার ১০হাজার ও কৃষি জমির মাটি প্রতি হাজার ১২ হাজার টাকা ধরে বিক্রি করি। এসময় অন্যান্য মাটি খেকোদের সাথে যোগাযোগ করলেও তারা ইট ভাটায় ও অন্যান্য ক্রেতাদের নিকট বিক্রি করার কথা স্বীকার করেন। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ৩নং চরহাজারী ইউপি চেয়ারম্যান মহি উদ্দিন সোহাগ বলেন, তাঁর এলাকায় তিনি যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন ফসলী জমি থেকে যেন কেউ যেন কেউ না কাটে এজন্য। কিন্তু রাজনৈতিক ও প্রভাবশালীদের কারনে পেরে উঠছেন না।

তবে তিনি রাজনৈতিক প্রভাবশালী নেতাদের নাম উল্লেখ করতে অপারগতা প্রকাশ করে বলেন, তিনি বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানাবেন। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মেজবা উল আলম ভূঁইয়া বলেন, আমরা কৃষি জমির টপসয়েল (উর্বর) মাটি রক্ষা করতে চেষ্টা করছি।ইতিপূর্বে অভিযোগ পেয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযুক্তদের জরিমানা করেছি।এছাড়াও জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে দুটি সভাও করেছি। আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

এনসি/

সর্বশেষ