বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ , ১৩ চৈত্র ১৪৩০

modhura
Aporup Bangla

পাবনার ৩৭ কৃষকের জামিন

দেশজুড়ে

অপরূপ বাংলা প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৬:২১, ২৭ নভেম্বর ২০২২

সর্বশেষ

পাবনার ৩৭ কৃষকের জামিন

ছবি-সংগৃহীত

পাবনার ঈশ্বরদীতে বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক নামের একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে টাকা ফেরত না দেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতারকৃত ১২ কৃষক জামিন পেয়েছেন। এছাড়া মামলার মোট ৩৭ আসামির বাকি ২৫ কৃষক আদালতে আত্মসমর্পন করে জামিন চাইলে আদালত তাদের জামিন মঞ্জুর করেন।

রোববার (২৭ নভেম্বর) সকাল ১১টার দিকে পাবনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মোহাম্মদ শামসুজ্জামান তাদের জামিনের আদেশ দেন। কৃষকদের পক্ষে আইনি প্রক্রিয়া পরিচালিত করতে যাবতীয় সহায়তা নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়ায় দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ বসুন্ধরা গ্রুপ। গ্রেফতারের পর জামিনপ্রাপ্তরা হলেন- উপজেলার ছলিমপুর ইউনিয়নের ভাড়ইমারি গ্রামের শুকুর প্রামানিকের ছেলে আলম প্রামানিক (৫০), মনি মন্ডলের ছেলে মাহাতাব মন্ডল (৪৫), মৃত কোরবান আলীর ছেলে কিতাব আলী (৫০), হারেজ মিয়ার ছেলে হান্নান মিয়া (৪৩), মৃত আবুল হোসেনের ছেলে মোহাম্মদ মজনু (৪০), মৃত আখের উদ্দিনের ছেলে মোহাম্মদ আতিয়ার রহমান (৫০), মৃত সোবহান মন্ডলের ছেলে আব্দুল গণি মণ্ডল (৫০), কামাল প্রামানিকের ছেলে শামীম হোসেন (৪৫), মৃত আয়েজ উদ্দিনের ছেলে সামাদ প্রামানিক (৪৩), মৃত সামির উদ্দিনের ছেলে নূর বক্স (৪৫), রিয়াজ উদ্দিনের ছেলে মোহাম্মদ আকরাম (৪৬) এবং লালু খাঁর ছেলে মোহাম্মদ রজব আলী (৪০)। এ মামলার সব আসামিই প্রান্তিক কৃষক। গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার সকাল পর্যন্ত পুলিশ অভিযান চালিয়ে বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংকের দায়ের করা ঋণখেলাপি মামলায় ৩৭ জন আসামির মধ্যে ১২ জন কৃষককে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠায়। জানা যায়, ২০১৬ সালে ৩৭ জন প্রান্তিক কৃষকের একটি গ্রুপে বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক জনপ্রতি ২৫ হাজার টাকা থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ প্রদান করে। ঋণখেলাপির দায়ে ২০২১ সালে ব্যাংকের পক্ষে তৎকালীন ব্যবস্থাপক সৈয়দ মোজাম্মেল হক মাহমুদ বাদী হয়ে ৩৭ জনের নামে মামলা দায়ের করেন। হয়রানি মামলায় ভুক্তভোগী একাধিক কৃষক ও তাদের পরিবারের দাবি, ঋণ গ্রহণের পর এক বছরের মাথায় অধিকাংশ ঋণগ্রহীতা তাদের ঋণ পরিশোধ করেছেন। তার পাশ বই ও জমা স্লিপও রয়েছে। অথচ সেই অর্থ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা জমা না করে আত্মসাৎ করেছেন। ফলে তাদের এই হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে। আদালত চত্বরে বাংলাদেশ কৃষক উন্নয়ন সোসাইটির কেন্দ্রীয় সভাপতি কৃষিতে বঙ্গবন্ধু জাতীয় পদকপ্রাপ্ত কৃষক সিদ্দিকুর রহমান ওরফে কুল ময়েজ বলেন, গত বুধবার যখন এ সকল কৃষকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়, তখন সবাই এলাকায় শীতের রাতে গাঁজরের ক্ষেতে কাজ করছিলেন। বাড়িতে ও বিভিন্ন স্থান থেকে পুলিশ ১২ জনকে গ্রেফতার করে। বাকিরা গ্রেফতার আতঙ্কে বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যান। তিনি বলেন, যে কৃষক সকালে ঘুম থেকে উঠে সারাদেশের মানুষের খাদ্যপণ্য উৎপাদনে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন, সেই কৃষককে হয়রানি মোটেও কাম্য নয়। অবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা এই হয়রানির মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। মামলায় হয়রানির শিকার কৃষক পরিবারের সদস্যরা গণমাধ্যমকে ধন্যবাদ জানান, মিডিয়ার অগ্রণী ভূমিকার কারণে আজ আমাদের স্বজনেরা আইনি সহায়তা পেলেন। তারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, গণমাধ্যমকে ধন্যবাদের পাশাপাশি বসুন্ধরা গ্রুপকেও ধন্যবাদ জানান। বসুন্ধরা গ্রুপের সামাজিক ফোরাম পাবনা শুভসংঘের উপদেষ্টা ইদ্রিস আলী বিশ্বাস বলেন, কৃষক হয়রানির খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের অন্যতম শিল্পগ্রুপ বসুন্ধরা কৃষকদের পাশে দাঁড়ায়। মামলার ৩৭ জনের জামিন ও গ্রেফতার হওয়া ১২ জনকে জামিনে মুক্ত করতে এবং অর্থনৈতিক সকল সহায়তা দিচ্ছে বসুন্ধরা গ্রুপ। মামলার বাদী বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংকের তৎকালীন ম্যানেজার সৈয়দ মোজাম্মেল হক মাহমুদ বলেন, কৃষকরা ঋণের টাকা পরিশোধ না করায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে মামলা করা হয়। খেলাপি ঋণ আদায়ে এটা চলমান প্রক্রিয়া। আমরা অফিসিয়ালি ব্যবস্থা নিয়েছি। তারা তাদের আইনগত সহায়তা পেয়েছেন। বসুন্ধরা গ্রুপের আইনগত সহায়তায় আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাইদুর রহমান সুমন বলেন, বিচারক গ্রেফতার হওয়া ১২ জন কৃষককে জামিনে মুক্তির নির্দেশ দিয়েছেন। বাকি ২৫ জনের জামিনও হলো। বিবাদীপক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে আরো ছিলেন অ্যাডভোকেট কাজী সাজ্জাদ ইকবাল লিটন ও অ্যাডভোকেট মইনুল ইসলাম মোহন। এদিকে পাবনা জেলা শহরের এলএমবি মার্কেটে বাংলাদেশ সমবায় ভূমি উন্নয়ন ব্যাংকের অফিসে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। অফিস তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। তবে পাবনা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে গিয়ে কৃষকদের নামে করা এ মামলার বাদী বাংলাদেশ সমবায় ভূমি উন্নয়ন ব্যাংকের নাটোর শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার সৈয়দ মোজাম্মেল হক মাহামুদকে পাওয়া যায়। তিনি বলেন, বিষয়টি একদিনে হয়নি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা মোতাবেক এ কৃষকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তাদের কাছে এখনো আমাদের আসল ও মুনাফাসহ ১৩ লাখ টাকার বেশি পাওনা রয়েছে। ২০১৬ সাল থেকে চলতি বছর পর্যন্ত তাদের কাছে টাকা পাওয়া যাবে। ঘটনার বিষয়ে জেলা প্রশাসক আমাদের ডেকে পাঠিয়েছেন। তার সঙ্গে কথা বলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মোতাবেক পরবর্তী পদক্ষেপ নেব। এ বিষয়ে পাবনা জেলা প্রশাসক বিশ্বাস রাসেল হোসেন বলেন, কৃষকদের নামে মামলার খবর এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পৌঁছে গেছে। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে একটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে আমাদের। সেসব নির্দেশনা মেনে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ও কৃষকদের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যা সাধানের চেষ্টা করছি। এছাড়া আইনগত বিষয়ে কৃষকদের সার্বিক সহযোগিতা দেওয়া হবে।

এনসি/

সর্বশেষ