শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

modhura
Aporup Bangla

অমর একুশে বইমেলার উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে

বিশেষ সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক মুনতাসির মামুন

সাক্ষাৎকার

অপরূপ বাংলা প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১০:০৪, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

আপডেট: ১০:০৫, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

সর্বশেষ

অমর একুশে বইমেলার উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে

অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন

যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে অমর একুশে বইমেলার যাত্রা, তা দিন দিন ব্যাহত হচ্ছে বলে মনে করেন লেখক, গবেষক, ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন। শিক্ষা-সংস্কৃতিতে সরকারগুলোর যথার্থ মনোযোগ না থাকার কারণেই তরুণ-তরুণীর মধ্যে মানসিক বিপর্যয় ঘটছে বলে মত দেন তিনি।

বইমেলা প্রসঙ্গ নিয়ে এই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন। তিনি বলেন, ‘বইমেলা আমাদের আবেগের এবং দীর্ঘ আকাঙ্ক্ষার ফল। আমরা বারবার এমন একটি মেলার আবেদন রেখে আসছিলাম এবং এর শুরুবেলা থেকেই আমি সম্পৃক্ত।’


‘শুরুতে বিভিন্ন প্রকাশনী দোকানের মতো করে মেলার আয়োজন করতে থাকে। তখন খুবই ছোট পরিসরে আয়োজন হতো। আমাদের আয়ত্তের মধ্যেই ছিল। তখন সব লেখক, গবেষক, বুদ্ধিজীবী মেলায় আসতেন। লেখকরা বিভিন্ন স্টলে বসতেন। আড্ডা দিতেন। তাতে পাঠক, প্রকাশকও নানাভাবে অংশ নিতেন। তখন মেলা জনবান্ধব, পাঠকবান্ধব ছিল।’

বইমেলায় প্রচুর তরুণ-তরুণী আসছে। আমরাও চেয়েছিলাম বইমেলা অবকাশের জায়গা হোক, মানুষ নিশ্বাস ফেলুক সাহিত্য-সংস্কৃতির সঙ্গে মিলিত হয়ে। বই কিনুক, বই পড়ুক। এ লক্ষ্য কিন্তু দিন দিন ক্ষীণ হয়ে পড়ছে। তরুণরা আসছে ঠিক। অবকাশের জন্যই আসছে শুধু। তারা বিভিন্ন রকমের ঘটন-অঘটনের জন্ম দিয়ে যাচ্ছে।

‘আজ ২০২৪ সালে মেলার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নিয়ে অন্যভাবে আলোচনা করতে হচ্ছে। মেলা আজ দুই ভাগে বিভক্ত। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ আর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিভক্ত। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে কেন স্টল রাখা হয় আমার ঠিক জানা নেই। এখানে মানুষ একেবারেই আসে না।
আমি গতকাল মেলা প্রাঙ্গণে গিয়েছিলাম। একটি বহুল পরিচিত প্রকাশনীতে দেখলাম পুরোনো ও ভারতীয় বইগুলো নতুন মলাটে প্রকাশ করা হয়েছে। অনেকেই না বুঝেই নতুন মনে করে কিনছে। অনেক প্রকাশনী তাই করছে। যদি বইয়ের ভিতরে না দেখে পাঠক বই কিনে থাকে তাহলে তাকে পস্তাতে হবে। বইমেলার পরিসর বাড়লেও উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়েছে নানাভাবে।’

‘বইমেলায় প্রচুর তরুণ-তরুণী আসছে। আমরাও চেয়েছিলাম বইমেলা অবকাশের জায়গা হোক, মানুষ নিশ্বাস ফেলুক সাহিত্য-সংস্কৃতির সঙ্গে মিলিত হয়ে। বই কিনুক, বই পড়ুক। এ লক্ষ্য কিন্তু দিন দিন ক্ষীণ হয়ে পড়ছে। তরুণরা আসছে ঠিক। অবকাশের জন্যই আসছে শুধু। তারা বিভিন্ন রকমের ঘটন-অঘটনের জন্ম দিয়ে যাচ্ছে।’


দীর্ঘ লাইন ধরে অনবরত মোবাইলে ছবি তোলা, কাউকে কাউকে বের করে দেওয়া, স্লোগান দেওয়ার মতো ঘটনা আমাদের যেমন অবাক করছে, তেমনি হতাশাও করেছে। বইমেলায় তরুণদের আচরণ বিরক্তিকর পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এই বিরক্তি নিয়ে অনেকেই পরপারে চলে গেলেন। আমরা যারা আছি, তারাও আর যেতে উৎসাহ পাই না। যেতে চাই না। খুব প্রয়োজন না পড়লে আমাদের বয়সীরা আর আসছেন না। এর মানে হচ্ছে, বইমেলা আমাদের কাছে আবেদন আর রাখতে পারছে না। বলছিলেন, অধ্যাপক মামুন।

আমি এ-ও বলবো, বইমেলা এখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হোক। রমনা অঞ্চল এখনো রাজধানীর জন্য ফুসফুস। এখানকার পরিবেশ দূষিত হচ্ছে, বইমেলা আর বিভিন্ন সমাবেশের কারণে। এসব বন্ধ করা দরকার। অন্য জায়গায় হোক।

বাংলা একাডেমির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘আমি আরেকটি বিষয় বারবার বলে আসছি বাংলা একাডেমির ভূমিকা নিয়ে। বইমেলার আয়োজন নিয়ে বাংলা একাডেমিকে চার মাস ব্যস্ত থাকতে হয়। প্রতিষ্ঠানটি এই সময়ে অন্য কাজ করতে পারে বলে মনে হয় না। অথচ, মেলার আয়োজন করা বাংলা একাডেমির কাজ নয়। এটি প্রকাশকদের কাজ। বাংলা একাডেমি এটিকে ছাড়তে চায় না, প্রকাশকরাও ছাড়তে চায় না। একধরনের অচলাবস্থার মধ্য দিয়ে মেলার আয়োজন করা হয়। এর নিরসন হওয়া দরকার। বাংলা একাডেমি একটি গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠান। মিলাদ-মাহফিলের আয়োজন করা যেমন এর কাজ নয়, তেমনি মেলা আয়োজন করাও শোভা পায় না। পৃথিবীর কোথাও এমন আয়োজন করা হয় না। যার কাজ তাকে দিয়ে করতে হয়।’

‘আমি এ-ও বলবো, বইমেলা এখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হোক। রমনা অঞ্চল এখনো রাজধানীর জন্য ফুসফুস। এখানকার পরিবেশ দূষিত হচ্ছে, বইমেলা আর বিভিন্ন সমাবেশের কারণে। এসব বন্ধ করা দরকার। অন্য জায়গায় হোক।
আমরা এমন চিৎকার করছি বহুকাল ধরে। মিডিয়াও ছাপে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ এসব আমলে নেয় না। বরং তারা বলবে, আমরা সমালোচনা করি। বিষয়টি এমন দাঁড়িয়েছে যে, আমরা যদি কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনাও করি তবুও সরকার, সরকারি দল, সংসদে, আমলারা মনে করেন আমরা সমালোচনা করছি, বিরোধিতা করছি। সমালোচনা করার অধিকারও আমাদের নেই। এ কারণেই চুপ থাকাও ভালো মনে করি।’

এমন অবনতির দায় প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমি দেখলাম, একজন তরুণী স্টলের সামনে বই হাতে নিয়ে ছবি তুলছে। অথচ উল্টো করে ধরে। তার কাছে বইয়ের আর কী মূল্য।
আসলে আমাদের শিক্ষা-সংস্কৃতির দিকে সরকার সঠিক মনোযোগ দেয়নি। টাকা বরাদ্দ হলেই সব হয়ে যায় না। সরকার তো মনেই করে উন্নয়ন মানে অবকাঠামো নির্মাণ। সরকার স্মার্ট বাংলাদেশ করার ঘোষণা দিয়েছে। শহরের ছেলেমেয়েরা এভাবে ছবি তুলে স্মার্ট হচ্ছে। আর গ্রামের মানুষ ওয়াজ শোনা নিয়ে ব্যস্ত। সরকার বাংলাদেশকে পুরোপুরি ধর্ম রাষ্ট্র করে ফেলছে। সরকারের কোনো এজেন্সি বা উইংসের এ নিয়ে মাথাব্যথা নেই। সংস্কৃতিতে সবচেয়ে কম বরাদ্দ দেওয়া হয়। দুনিয়ার কোথাও এমন কম বরাদ্দ নেই। শিক্ষা-গবেষণায়ও তাই। যে বরাদ্দ দেওয়া হয়, তা বেতন আর অবকাঠামো নির্মাণ করতেই শেষ। আমি এসব বললে শিক্ষামন্ত্রী অসন্তুষ্ট হন। কী দরকার এসব বলার?’

জ.ই

সর্বশেষ

জনপ্রিয়