জাফরিন আক্তার
বঙ্গবন্ধু ৪৬তম জাতীয় অ্যাথলেটিকসের দ্বিতীয় দিনে মেয়েদের ডিসকাস থ্রোতে শুধু সোনাই জেতেননি জাফরিন, ২৯ বছরের রেকর্ডও ভেঙেছেন। গত ২৩ ডিসেম্বর ওই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৯ সালে কাঠমুন্ডুতে দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে মেয়েদের ডিসকাস থ্রোতে ৪১ দশমিক ২৯ মিটার দূরত্বে পাঠিয়ে ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন শ্রীলঙ্কার ইশারা মাধুরাঙ্গি। তার চেয়েও ২ দশমিক ২০ মিটার বেশি দূরত্বে চাকতি নিক্ষেপ করেছেন জাফরিন।
বাংলাদেশ নৌবাহিনীর অ্যাথলেট জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলার উচাই গ্রামের কৃতি কন্যা জাফরিন আক্তার। পড়াশোনাতেও দুর্দান্ত প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন জাফরিন। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামিক ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর দুই বিভাগেই পেয়েছেন প্রথম শ্রেণি।
জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার উচাই গ্রামের মেয়ে জাফরিন। তার উচ্চতা -৫ ফুট ৯ ইঞ্চি। মেয়ে হয়ে বেশি লম্বা হওয়ায় তিনি থেলা ধুলায় অত্যন্ত পারদর্শী ছিল। ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নিতেন কিন্তু মফস্বেল ঠিকমতো অনুশীলনের সুযোগ পেতেন না। এমনকি অনুশীলনে গেলে গ্রামের লোকেরা, প্রতিবেশীরা সমালোচনা করতো। এমন একটি প্রতিকূল অবস্থার মধ্য দিয়ে দিন পার করেছেন।
সেই কঠিন দিনগুলোর কথা মনে করে জাফরিন বলেন, ‘আমাদের এলাকায় মেয়েরা শর্টস আর ট্রাউজার পরে অনুশীলন করলে সবাই বাঁকা চোখে তাকায়। বাংলাদেশের গ্রামের লোকেরা একটু কুসংস্কাওে বিশ্বাসী, মেয়েরা আবার খেলাধুলা করবে?
তিনি বলেন, ‘এলাকায় অনুশীলনের সুযোগ না থাকায় অনেক সময় অনুশীলন ছাড়া বিভিন্ন গেমসে অংশ নিতাম। এরপর আমি বিকেএসপিতে এসে ভালোভাবে অনুশীলনের সুযোগ পেয়েছি, তারপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি।’
জাফরিনের বাবা স্কুল শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘দেশের খেলোয়াড়দের প্রধান পৃষ্ঠপোষক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ সেরা কৃতি খেলোয়ারদের আর্থিক পুরস্কার বাড়ি,প্লট প্রদান করে যেভাবে উৎসাহ দিয়ে থাকেন, ঠিক সেভাবে অ্যাথলেটিক্স ইভেন্টে ডিসকাস থ্রোতে ২৯ বছরের পুরনো রেকর্ড ভঙ্গকারী কৃতি নারী খেলোয়াড় জাফরিনের ক্ষেত্রেও অনুরূপ সহযোগিতা করে উৎসাহিত করবেন, এটাই আশা করছি। সে যেন সাউথ এশিয়াান গেমসে স্বর্ণপদক জয় করে দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনতে পারে। আমি আমার কন্যার জন্য সকলের কাছে দোয়া ও আশীর্বাদ কামনা করছি। সেই সঙ্গে স্থানীয় জেলা,উপজেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে নারী খেলোয়াড় তৈরি ও তাদের উন্নতিতে আরো উৎসাহ ও সহযোগিতা আশা করছি।’
জাফরিনের ভাই সাহিউল আলম শুভ বিকেএসপির বাস্কেটবলের প্রাক্তন খেলোয়াড়। বর্তমানে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে কর্মরত। বোন জাকিয়া সুলতানা বিকেএসপির শুটিং ও ক্রিকেট বিভাগের নিয়মিত প্রশিক্ষণার্থী।
পরিবার থেকে খেলার ব্যাপারে সব রকমের সমর্থন পেয়েছেন। এমনকি বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ি থেকেও সমর্থন পেয়েছেন।জাফরিন বলেন,‘আমার বাবা সব সময় খেলার ব্যাপারে স্বাধীনতা দিয়েছেন। সবচেয়ে মজার ব্যাপার এখন স্বামীও কোনো বাধা দেন না। সবার উৎসাহে খেলাধুলা করছি।’
শুরুতে নৌবাহিনীর শটপুট ইভেন্টে অংশ নিতেন জাফরিন। কিন্তু তার উচ্চতা (৫ ফুট ৯ ইঞ্চি) দেখে কোচ ডিসকাস থ্রোতে অংশগ্রহণের পরামর্শ দেন। সেই থেকে নিয়মিত জাফরিনের খেলা জাতীয় অ্যাথলেটিকসে। জাফরিন বলেন, ‘ভাবিনি এত রেকর্ড করতে পারবো। নিজের রেকর্ড দেখে নিজেই অবাক হয়েছি। সুযোগ-সুবিধা পেলে অবশ্যই দেশকে এসএ গেমসের পদক এনে দিতে চাই।
এনসি/