বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪ , ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

modhura
Aporup Bangla

বিশেষ সাক্ষাৎকারে আবদুস সবুর খান, উপাচার্য মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিশেষত্ব হচ্ছে গুণগত নৈতিক শিক্ষা প্রদান করা

সাক্ষাৎকার

অপরূপ বাংলা প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১২:১৭, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

আপডেট: ১৫:১১, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

সর্বশেষ

মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিশেষত্ব হচ্ছে গুণগত নৈতিক শিক্ষা প্রদান করা

আবদুস সবুর খান, উপাচার্য মানারাত ইন্টারন্যাশনাল

অপরূপ বাংলা : বর্তমানে শিক্ষার মান হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়টির অবস্থান কোথায়?

আবদুস সবুর খান : উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসাবে বহু আগ থেকেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় বিকাশ লাভ করলেও বাংলাদেশে এর প্রচলন ১৯৯৩ সালে। দক্ষ, কার্যকর ও যোগ্য জনশক্তিকে সংগঠিত করার জন্য উচ্চ শিক্ষার ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে ১৯৯২ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাস হয় এবং ১৯৯৩ সাল থেকে বাংলাদেশে উচ্চ শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে বেসরকারি পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সূচনা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। বাংলাদেশে বেসরকারী উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এটি ২১ তম বিশ^বিদ্যালয়। শুরু থেকেই এ বিশ^বিদ্যালয় উচ্চ শিক্ষার গুণগত মান এবং নৈতিকতাকে এর প্রধান লক্ষ্য স্থির করে ‘আ সেন্টার অব একাডেমিক অ্যান্ড মোরাল এক্সিলেন্স’ স্লোগানকে ধারণ করে আজ অবধি তার শিক্ষাকার্যক্রম চালিয়ে আসছে এবং এ যাবত বহু সংখ্যক দক্ষ গ্র্যাজুয়েট তৈরি করেছে। যারা দেশে-বিদেশে নিজেদের দক্ষতা এবং যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখে চলেছে। বর্তমানেও শিক্ষার মানগত দিক থেকে বেসরকারি বিশ^বিদ্যায়গুলোর মধ্যে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটর অবস্থান উপরের সারিতেই অবস্থান করছে। 

অপরূপ বাংলা : জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে কি কি উদ্যোগ নেয়া হয়েছে?

আবদুস সবুর খান:  মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে আটটি বিভাগে মোট ১৪টি প্রোগ্রামে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এর বেশিরভাগই বিজ্ঞান বিষয়ক। এ ক্ষেত্রে ফার্মেসি, সিএসই, ইইইর কথা উল্লেখ করা যায়। বাণিজ্য এবং কলা ও মানবিক অনুষদেরও বেশ কয়েকটি বিভাগ রয়েছে। যেমন বিবিএ, ইংরেজি, ইসলামিক স্টাডিজ, জার্নালিজম এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ। এ বিশ^বিদ্যালয়ের আইন বিভাগেরও যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। বিজ্ঞান বিষয়ক বিভাগগুলোতে প্রয়োজনীয় ল্যাব-এর পাশাপাশি বাণিজ্য ও কলা অনুষদভুক্ত বিভাগসমূহসহ সকল বিভাগের জন্যই লাইব্রেরিতে প্রচুর সংখ্যক বই রয়েছে। শিক্ষার্থীদের জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার এবং লিডারশিপ গঠনের জন্য রয়েছে পৃথক পৃথক বৈশিষ্ট্যের চৌদ্দটি ক্লাব, নিয়মিত স্টাডি ট্যুর, সাংস্কৃতিক উৎসব, স্পোর্স, বিতর্ক প্রতিযোগিতা প্রভৃতি কো-কারিকুলার এ্যক্টিভিটিজ। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহীদ দিবসকে কেন্দ্র করে ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আমরা সাংস্কৃতিক সপ্তাহের আয়োজন করেছি। এতে বইমেলা, আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি পিঠা ও হস্তশিল্পের প্রদর্শনীও থাকবে। মার্চে মহান স্বাধীনতা দিবস, ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মোৎসব উপলক্ষ্যে সপ্তাহব্যাপী স্পোর্স কার্নিভ্যালের আয়োজন করা হয়েছে। এসব আয়োজন শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে শিক্ষা গ্রহণের পাশাপাশি প্রায়োগিক শিক্ষা, নেতৃত্বের দক্ষতা অর্জন, দেশাত্মবোধ ও জাতীয় চেতনার সম্মক জ্ঞানার্জনে উদ্বোদ্ধ করবে।  আমরা বিশ্বাস করি এর ফলে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার চারটি মূল ভিত্তি যথাক্রমে স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট ও স্মার্ট সোসাইটি গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নের নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হবে।

অপরূপ বাংলা: এই  বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষত্ব কি?

আবদুস সবুর খান: গুণগত নৈতিক শিক্ষা প্রদান করাই এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষত্ব। কারণ আমরা মনে করি ‘পানির অপর নাম জীবন’ এই ধারণা যেমন পূর্ণ সত্য নয়, পূর্ণ সত্য হচ্ছে ‘বিশুদ্ধ পানির অপর নাম জীবন’। কারণ দূষিত পানি জীবন রক্ষা করতে পারে না বরং তা জীবনের জন্য শংকা তৈরি করে। তেমনি  ‘শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড’ এই ধারণাও পূর্ণ সত্য নয়। পূর্ণ সত্য হচ্ছে ‘নৈতিক শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড’। কারণ শিক্ষার সাথে নৈতিকতার সংযোগ না থাকলে সে শিক্ষা নৈতিক মানুষ তৈরি করতে পারে না। তাই মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি নৈতিক শিক্ষার প্রতিই অধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকে। তাই প্রতিটি ডিসিপ্লিনেই সেই ডিসিপ্লিনের মূল বিষয়ে শিক্ষাদানের পাশাপাশি তাদেরকে নৈতিক শিক্ষাও প্রদান করে থাকে। এটিই এ বিশ^বিদ্যালয়ের বিশেষত্ব। 

অপরূপ বাংলা: আগামী চার বছরে আরো কি কি উদ্যোগ নেবেন?

আবদুস সবুর খান:  বর্তমানে আমরা এআই তথা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সি বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগে বসবাস করছি। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে প্রবেশ করছে বর্তমান বিশ^। তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞানে সমৃদ্ধ একটি শিক্ষিত জনগোষ্ঠী সৃষ্টি না হলে আধুনিক স্মার্টবিশ্বে কোনো দেশই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারবে না। তাই আগামী চার বছরে তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর বেশ কয়েকটি নতুন বিভাগ প্রতিষ্ঠা করার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। পাশাপাশি বিদ্যমান বিভাগগুলোতেও শিক্ষাসহায়ক সুযোগ-সুবিধা আরও বৃদ্ধি করে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটদের আধুনিক বিশ্বের উপযোগী গ্র্যাজুয়েট হিসেবে করে গড়ে তোলাই আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা।  


অপরূপ বাংলা: বেসবরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে এখানে বাংলাভাষা অবহেলিত। সত্যিই কি তাই? আপনার বিশ^বিদ্যালয়ের অবস্থা কি?

আবদুস সবুর খান:  এই ধারণা সম্পূর্ণ সঠিক নয়। তবে হ্যাঁ, একথা ঠিক যে শুরুর দিকে কিছু সংখ্যক বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা অনেকটাই অবহেলিত ছিল। কিন্তু বর্তমান ওবিই শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় সরকার তথা বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন সরকারি-বেসরকারি নির্বিশেষে সকলবিশ্ববিদ্যালয়েই স্নাতক পর্যায়ে সকল অনুষদভুক্ত শিক্ষার্থীদের জন্য বাংলা, ইংরেজি ও বাংলাদেশ বিষয়ক পাঠদান বাধ্যতামূলক করে দিয়েছেন। ফলে এখন আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও বাংলা ভাষা অবহেলিত থাকার অবকাস নেই।  

অপরূপ বাংলা : আপনি নিজে একজন শক্তিমান সাহিত্যিক। শিক্ষার্থীদের সাহিত্য চর্চায় কিভাবে উৎসাহ দেবেন?

আবদুস সবুর খান:  সাহিত্য ব্যক্তির মনন ও রুচিবোধকে বিকশিত করে। মানবিক বোধ জাগ্রত করে। ব্যক্তিকে সামষ্টিক চেতনায় উদ্বোদ্ধ করে। শিক্ষার্থীদের সাহিত্য চর্চায় উদ্বোদ্ধ করার লক্ষ্যে আমরা কিছু কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। বিভিন্ন উৎসব ও দিবস উপলক্ষ্যে মানারাতের শিক্ষার্থীরা দেয়ালিকা প্রকাশ করে থাকে। গত বিজয় দিবসেও এমআইইউ ডিবেট ক্লাব একটি দেয়াল পত্রিকা প্রকাশ করেছে। এ ছাড়া আমি ঠিক করেছি মাঝে মধ্যে শিক্ষার্থীদের জন্য সাহিত্য সভা এবং সাহিত্য আড্ডারও আয়োজন করবো। যেগুলোতে তারা নিজেদের রচিত সাহিত্যকর্ম পাঠ করার সুযোগ পাবে। পাশাপাশি দেশের খ্যাতিমান বরেণ্য কবি-সাহিত্যিকদের সান্নিধ্য লাভ করতে পারবে।

অপরূপ বাংলা: বাংলা ভাষাকে  বিশ্বময় ছড়িয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে আপনার কোনো পরামর্শ আছে কি?

আবদুস সবুর খান:  পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ তাঁদের নিজেদের ভাষা ও সাহিত্যকে বিশ্বময় ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে বাইরের দেশের বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয়ের সাথে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজেদের ভাষা ও সাহিত্য অধ্যয়নের সুযোগ তৈরি করে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্য পৃথিবীর অন্যতম সমৃদ্ধ ভাষা ও সাহিত্য। এ ছাড়া দেশ হিসেবে আমরা এখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে পৌঁছে গেছি। পৃথিবীতে আমরাই ভাষার জন্য লড়াই করে আমাদের ভাষার মর্যাদা রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের ভাষা ও সাহিত্যকে বিশ্বময় ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে আমরাও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করে সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য অধ্যয়নের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারি। 

অপরূপ বাংলা : অপরূপ বাংলাকে সময় দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।
আবদুস সবুর খান:  আপনাকেও ধন্যবাদ। 

জ.ই

সর্বশেষ